...
মঙ্গলবার, জুলাই ১৬, ২০২৪

ধর্মপাশায় ইজিবাইক চালক হত্যামামলার রহস্য উদঘাটনসহ ৭ আসামি গ্রেফতার

যা যা মিস করেছেন

এ,এম স্বপন জাহান
মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় ইজিবাইক চালক হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে ধর্মপাশা থানা পুলিশ । গ্রেফতারকৃতরা হলেন-ধর্মপাশা থানার দুধবহর গ্রামের মোঃ রতন মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেন দিলু (৩০), রফিকুল ইসলামের ছেলে আজিম উদ্দিন (২৫), একই গ্রামের মোঃ রফিকের ছেলে নুরুল আমীন (২২), মোঃ ময়না মিয়ার ছেলে রুবেল (২২), মোঃ আবুল কাসেমের ছেলে জাকিরুল ইসলাম ইমুল (২৪), একই থানার দক্ষিণ নোয়াগাঁওয়ের মোঃ স্বপন মিয়ার ছেলে কাউছার নিয়াশ (২৪) এবং নেত্রকোনা সদর থানার ঠাকুরকোনা গ্রামের মৃত গোলম রব্বানীর ছেলে সেলিম মিয়া (৩৫)। ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একাধিক টিম ধর্মপাশা থানাসহ ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ১ মে হতে ৩ মে পর্যন্ত ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে আসামিদের গ্রেফতার করেন।
আজ শনিবার (৪ মে ২০২৪ খ্রি.) দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাজন কুমার দাস বলেন-গত ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় ধর্মপাশা থানাধীন আতকাপাড়া গ্রামের বিল্লাল নুরীর ধান ক্ষেত থেকে অর্ধগলিত ১টি লাশ পাওয়া যায়। উক্ত বিষয়ে থানা পুলিশ তদন্তে নেমে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে। অর্ধগলিত লাশটি ছিলো ধর্মপাশাধীন দক্ষিন নোয়াগাঁও গ্রামের মোঃ কারি মিয়া খানের ছেলে অটোচালক সাইকুল ইসলাম খান (২৭)। এ বিষয়ে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল ধর্মপাশা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।

মামলাটি তদন্ত শুরুর পর গত ২৫ এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টায় ধর্মপাশা থানাধীন কান্দাপাড়া গ্রামস্থ নিমাইকোনা হাওড়ের জনৈক সাহাব উদ্দিনের ধান ক্ষেত থেকে ১টি মানব দেহের মাথার খুলি এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়ের সাথে থাকা ময়লাযুক্ত কাপড় উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে থানা পুলিশ তদন্তে নেমে লাশের পরিচয় সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। লাশটি ছিলো ধর্মপাশা থানার দশধরী গ্রামের মোঃ কামাল মিয়ার ছেলে অটোচালক হুমায়ুন কবির (২০)। এ বিষয়েও অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে ২৯ এপ্রিল ধর্মপাশা থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।

মামলা ২টির ঘটনায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাইসহ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন অফিসারদের দিকনির্দেশনায় ধর্মপাশা থানার অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে থানা পুলিশের একাধিক টিম অভিযান পরিচালন করে উক্ত মামলা ২টির সাথে জড়িত ৭ আসামিকে গ্রেফতার করে।এছাড়া এ অভিযানে চোরাইকৃত ১টি অটোরিক্সা এবং অপর ১টি অটোরিক্সার ৪টি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।

আসামি রুবেলকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উক্ত ২টি হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং সে সহ আসামি দেলোয়ার, আজিম, নুরুল, ইমুল, নিয়াশ মিলে হত্যা করে বলে জানায়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

আটককৃত আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত রমজান মাসে ১৬ মার্চ ইফাতার শেষে আসামিরা অটোরিক্সা চুরির পরিকল্পনা করে। প্রথমে তারা সাইকুল ইসলামের অটোরিক্সা চুরির সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু সাইকুল সকল আসামির পরিচিত হওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তারা হুমায়ুন কবিরের অটোরিক্সা চুরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৭ মার্চ সন্ধ্যার দিকে আসামিগণ বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে অটোরিক্সা চালক হুমায়নকে তার অটোরিক্সা নিয়ে আসতে বলে। সে অটোরিক্সা নিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামের রাস্তায় আসলে সকল আসামি অটোরিক্সায় উঠে বসে। পরে আসামিরা নিমাইকোনা হাওড়ের রাস্তায় অটোরিক্সা রেখে হুমায়নকে হাওরের ধান ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে আসামিরা গামছা দিয়ে হুমায়ুনের গলা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আসামিরা ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মৃতদেহ ধান ক্ষেতের ভিতরে ফেলে চলে আসে। পরে তারা হুমায়নের অটোরিক্সাটি নিয়ে আটককৃত আসামি সেলিম মিয়ার নিকটে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

ভিকটিম হুমায়ুনের পরিবার থেকে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে কোন তৎপরতা না থাকায় এবং নিখোঁজের বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত না করায় আসামিগণ পুনরায় গত ৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইফতার শেষে পূর্বের ন্যায় সাইকুল ইসলামের অটোরিক্সাটি চুরির পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৮ এপ্রিল দুপুরে আসামি রুবেল ও ইমুল সাইকুলের অটোরিক্সা নিয়ে নেত্রকোনা সদর থানার ঠাকুরকোনা বাজারে যায়। পরে তারা সন্ধ্যার দিকে ধর্মপাশা থানাধীন আতকাপাড়া গ্রামের উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জনাব বিল্লাল নুরীর মৎস ফিসারীর কাছে আসে। সেখানে দেলোয়ার, নুরুল, নিয়াশা, আজিম অবস্থান করছিলো। যেহেতু আসামিরা ভিকটিম সাইকুল ইসলামের পরিচিত তাই তারা সকলে মিলে অটোরিক্সাটি রাস্তার পাশে রেখে গাঁজা খাওয়ার জন্য ফিসারীর উত্তর পাশে যায়। সেখানে তারা গাঁজা সেবন করে। পরে আসামিরা কৌশলে একটি চামড়ার বেল্ট দিয়ে ভিকটিম সাইকুল ইসলামের গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। আসামিরা ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর মৃতদেহ ফিসারীর উত্তর পাশে ধান ক্ষেতের মাঝামাঝি স্থানে ফেলে চলে আসে। পরে তারা সাইকুলের অটোরিক্সাটি নিয়ে আটককৃত আসামি সেলিম মিয়ার নিকটে ৩৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে।

প্রেসব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) রাজন কুমার দাস বলেন-গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আসামিরা বর্ণিত ২টি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.