দেশের ছবি চলে না, এই যুক্তি দেখিয়ে ভারতীয় ছবি আমদানির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে সফল একটি মহল। অথচ দর্শক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও প্রেক্ষাগৃহের অভাবে ব্যবসায় করতে পারছে না দেশের ছবি।
সর্বশেষ গত ৩০ সেপ্টেম্বর আয়নাবাজি ছবিটি মুক্তি দেয়া হয়েছিল মাত্র ২১টি প্রেক্ষাগৃহে। অথচ সিনেমাপাড়ায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এই ছবিটি দীর্ঘ দিন পর হলমুখী করেছে দর্শকদের। শোয়ের সময় টিকিটের জন্য চলে কাড়াকাড়ি। প্রতিদিন অতিরিক্ত শো চালিয়েও দর্শকের ঢল সামাল দিতে পারছে না।
ঢাকায় মাল্টিপ্লেক্স কালচার খুব বেশি দিনের নয়। এই কালচারের ক্রমবিকাশে আয়নাবাজি এক বড় পদক্ষেপ বলে ধরা দিয়েছে সিনেমাওয়ালাদের কাছে। প্রথম সপ্তাহে অল্প প্রেক্ষাগৃহে রিলিজ হলেও ঢাকায় আয়নাবাজি সাড়া ফেলেছে নজিরবিহীন।
উচ্চমূল্যে টিকিট কেটে সপরিবারে ছবি দেখছেন দর্শকেরা। বন্ধুবান্ধবের বড় বড় দল নিয়ে হইহল্লা চলছে সিনেমা হলের আঙিনায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাসের ঝড় বইছে আয়নাবাজির প্রশংসায়। মিডিয়া-ব্যক্তিত্বরা নিজেদের ওয়ালে ছবিটির বিপুল প্রশংসা করছেন। দর্শক চাহিদা দেখে স্টার সিনেপ্লেক্সে প্রতিদিন ছয়টির বেশি শো চালানো হচ্ছে। এক দিন আগেও অনলাইনে অগ্রিম টিকিট কেটে ছবি দেখার সুযোগ মিলছে না।
গত ঈদে যারা দল বেঁধে সিনেমা হলে এসেছিলেন, তারা আবার ফিরে এসেছেন। তবে টিকিট নিয়ে আক্ষেপটা আগের চেয়ে বেশি।
গত ঈদেও বলাকা সিনেমা হলে ভিড় হয়েছিল দর্শকদের। তবে সেটি একটি যৌথ প্রযোজনার ভারতীয় নায়কের ছবির জন্য ঘটেছিল। হৃদয়ের টান বলতে যা বোঝায়; ছিল তার অনুপস্থিতি। রিমেক ছবি দেখে তৃপ্তির চেয়ে দেশীয় সিনেমার পিছিয়ে পড়ার অতৃপ্তিই বেশি বেজেছিল।
৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বলাকার চিত্র অন্যরকম। সম্পূর্ণ দেশীয় শিল্পী, কলাকুশলীদের নির্মিত মৌলিক গল্পের বড় ক্যানভাসের ছবি আয়নাকবাজি দেখতে দর্শকেরা ছুটে যাচ্ছেন নিউমার্কেটে। ব্ল্যাকে টিকিট কেটে প্রায় প্রতিটি শো হাউজফুল করে দিচ্ছেন।
দর্শকদের এমন সাড়া পেয়ে বলাকা সিনেমা হলকর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় সপ্তাহেও ছবিটি রেখে দিয়েছেন। গ্রামগঞ্জের অনেক দর্শক আশা করেছিল, দ্বিতীয় সপ্তাহে তাদের কাছে কোনো প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দল বেঁধে দেখতে যাবেন সবাই। অথচ প্রেক্ষাগৃহগুলো দখল করে নিয়েছে আমদানিকৃত ভারতীয় ছবি প্রেম কি বুঝিনি।
বিষয়টি নিয়ে তারকামহলে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করা হলেও বাস্তব চিত্র দেখে মনে হয়েছে, এগুলো দেখার কেউ নেই। এভাবে চলতে থাকলে ভালো ছবি নির্মাণে দেশের নির্মাতা আর প্রযোজকেরা উৎসাহ পাবেন কোথা থেকে?