ভারতের বিতর্কিত ইসলামী বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে উৎসাহ যোগানোর অভিযোগ ওঠার পর তার পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ১২ দপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটির এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয় বলে শিল্পমন্ত্রী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশে দুই দফা বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভা কমিটির এই ‘বিশেষ’ বৈঠক হয়, যাতে শিল্পমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।
জাকির নায়েক পরিচালিত মুম্বাইভিত্তিক ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিষ্ঠান হল এই পিস টিভি। এ টিভিতে ধর্ম নিয়ে আলোচনায় ইসলামের যে ব্যাখ্যা তিনি দেন, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।ব্রিটেন, আমেরিকায় চ্যানেলটি নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ মালয়েশিয়ার মতো মুসলিম প্রধান দেশেও।
গত ১ জুলাই গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলায় জড়িতদের মধ্যে অন্তত দুজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জাকির নায়েককে নিয়মিত অনুসরণ করত। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জাকির নায়েকের বিষয়ে উদ্যোগী হয় ভারত সরকার। গুলশান হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ মোট ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
গুলশানে হামলাকারীদের মতো ভূস্বর্গ কাশ্মীরে নিহত জঙ্গিনেতা বুরহান ওয়ানিও ছিল জাকির নায়েকের ভক্ত। আর এর প্রমাণ মিলেছে ওয়ানির করা শেষ টুইটে।
গত শুক্রবার (৮ জুলাই) কাশ্মীরে সেনার হাতে মৃত্যু হয় ২২ বছরের বুরহানের। সে দিনই টুইটারে বুরহান লিখেছিল, ‘জাকির নায়েককে সমর্থন করুন নইলে এমন সময় আসবে যখন কোরান পাঠ নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।’ ওই কথাই ছিল বুরহানের শেষ টুইট। বুরহান ভাই নামে ওই টুইটার অ্যাকাউন্ট চালাত সে।
এদিকে শুধু চ্যানেল বন্ধ করে দেয়াই নয়, জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছে নয়াদিল্লি। তার বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থার’ কথা ভাবছে ভারত। জাকিরের বিপুল জনসমর্থনের বিষয়টি মাথায় রেখে আটঘাট বেঁধে এগোচ্ছে দেশটির সরকার। আর তাই জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তে ৯টি দল গঠন করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ হওয়া নিয়ে শনিবারই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘এই টিভিটি সম্পর্কে কিছু অভিযোগ আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হবে। মন্ত্রণালয়ের অফিস খুললেই কাজ শুরু হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে সরকারের স্ট্যান্ড আমরা স্পষ্ট করব।’
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনকে সন্ত্রাসী বলতে অস্বীকার করেছিলেন জাকির নায়েক। তার বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বহু তরুণ জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে অভিযোগ রয়েছে।