হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি ডলার লোপাটের প্রেক্ষাপটে গভর্নরের পদ ছাড়লেন আতিউর রহমান। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে তিনি মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে পদত্যাগপত্র দেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান।
এর আগে সকালে গুলশানে নিজের বাসায় কয়েকজন সাংবাদিককে আতিউর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইলে’ তিনি পদত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছেন।
“আমি অপেক্ষা করছি, প্রধানমন্ত্রী কী বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, দেশের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। আমি পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রী বলার সঙ্গে সঙ্গে আমি পদত্যাগ করব।”
এ সময় গভর্নরের হাতে পদত্যাগপত্র দেখা যায়।
২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের চার মাস পেরিয়ে ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের দশম গভর্নর হিসাবে চার বছরের জন্য দায়িত্ব নেন আতিউর। এরপর তাকে আরও এক মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বে রাখার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। ২০১৬ সালের ২ অগাস্ট তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
আতিউরের মেয়াদকালে দেশে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কয়েকগুণ বেড়ে ২৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাট হওয়ার খবর প্রকাশের পর সমালোচনার মধ্যে পদ ছাড়লেন আতিউর। ফিলিপিন্সের ডেইলি ইনকোয়ারারে ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলার লোপাটের খবর এলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় ওঠে।
তদন্তে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সুইফট মেসেজিং সিস্টেমে হ্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই অর্থ ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে সরিয়ে ফেলা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাওয়ার আগে সকালে গুলশানে নিজের বাসায় কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন গভর্নর আতিউর রহমান। এ সময় তার হাতে পদত্যাপত্র দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক শুরুতেই বিষয়টি টের পেলেও কর্মকর্তারা তা গোপন করে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে এক মাস পর তা পত্রিকা পড়ে জানতে হয়।
অর্থ লোপাটের বিষয়টি চেপে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেভাবে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাকে ‘অযোগ্যতা’ আখ্যায়িত করে ‘ক্ষুব্ধ’ মুহিত রোববার বলেছিলেন, এই ‘স্পর্ধার’ জন্য ‘অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
অর্থ লোপাট এবং তার তদন্ত নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে গভর্নরের পদত্যাগের খবরের পর তা বাতিলের ঘোষণা এসেছে।
গভর্নরের দায়িত্ব পালনকালে দেশ-বিদেশে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পান আতিউর রহমান। গত বছর লন্ডনভিত্তিক প্রভাবশালী পত্রিকা দি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে ‘সেন্ট্রাল ব্যাংকার অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করে। এর আগে ফিলিপিন্সের গুসি শান্তি পুরস্কার পান তিনি।
আতিউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৯ সালের ২৮ নভেম্বর, জামালপুরে।
মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পাসের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি। পিএইচডি ডিগ্রি পান ১৯৮৩ সালে৷
মাস্টার্স পড়ার সময়ই ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে প্ল্যানিং অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আতিউর রহমান। ১৯৮৩ সালে যোগ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে (বিআইডিএস)৷ এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন।