‘স্ট্রোকে’ মারা গেছেন— এমন বক্তব্য দিয়ে বাবার মৃত্যুর খবর মাইকে প্রচার করেছে নিহতের দুই ছেলে। আত্মীয়-স্বজনেরা এ খবর পাওয়ার পর মৃতের বাড়িতে দ্রুত ছুটে গেলে তারা নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। তাদের অভিযোগ, তিন কোটি টাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে দুই ছেলে।
তবে এ ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দরিয়াপুর গ্রামের মৃত মোজাফফর আলীর ছেলে কিতাব আলী হবিগঞ্জ শহরের মাহমুদাবাদ এলাকায় বসবাস করতেন। সম্প্রতি কিতাব আলী বিভিন্ন স্থানে ৩ কোটি টাকার জমি বিক্রি করে। জমি বিক্রির টাকা নিয়ে তার দুই ছেলের সঙ্গে কিতাব আলীর বিরোধ বাধে।
বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় কিতাব আলী মারা গেছে মর্মে তার দুই ছেলে মাইকে প্রচার করে। এ খবর শুনে আশপাশের লোকজন তাকে দেখার জন্য বাড়িতে যান। এ সময় কিতাব আলীর শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা।
নিহত কিতাব আলীর বোন পুতুল বেগম অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তিনি তার ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পান। কিন্তু কিতাব আলীর ছেলে-মেয়েরা তার ভাই বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কোনো খবর না দিয়ে তাড়াতাড়ি করে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নেয়।
এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে নিহতের ছোট ভাই বিলাত মিয়া, বোন জমিলা বেগম ও পুতুল বেগম তাদের ভাই কিতাব আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাত ১০টায় দিকে তার বাসায় যান। এ সময় তারা কিতাব আলীর গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। এতে তাদের সন্দেহ হয়, সন্তানরা কিতাব আলীকে হত্যা করেছে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি তারা হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য অনুরোধ জানান।
পরে রাত ১১টার দিকে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
কিতাব আলীর ছোট ভাই বিলাত মিয়া বলেন, নিহতের ছেলে জুনায়েদ মিয়া ওরফে জুয়েল ও আল-আমিন সম্পত্তির লোভে তার বাবাকে হত্যা করে আমাদের না জানিয়ে লাশ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সংবাদ পেয়ে আমরা এ বিষয়টি পুলিশকে জানাই।
হত্যার ঘটনা অস্বীকার করে কিতাব আলীর বড় ছেলে জুনায়েদ মিয়া জানান, তিনি সিলেটে তাবলীগ জামাতের চিল্লায় ছিলেন। সন্ধ্যার দিকে খবর পান তার বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছেন। এ খবর পেয়ে তিনি বাসায় ফেরেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার বাবা অ্যাজমায় আক্রান্ত ছিলেন। এর আগে আরো একবার স্ট্রোক করেছিলেন।
হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, অভিযোগের কারণে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।