মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে
ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের সবচেয়ে বড় প্রকল্প।
প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ের এই সেতু দিয়ে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ১৯ জেলা। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনও চলবে।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়ার সার্ভিস এলাকায় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, “ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রায় ২৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। শনিবার থেকে শুরু হবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ ও নদী শাসন কাজ।”
প্রকল্পে নির্ধারিত ২০১৮ সালের মধ্যে কাজ শেষ করে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
পদ্মা সেতু কেবল দেশের দক্ষিণ আর পূর্বাঞ্চলের সেতুবন্ধ হবে না, এই সেতু এশিয়ান হাইওয়ের রুট এএই-১ এর অংশ হিসেবেও ব্যবহার হবে।
পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
পদ্মা সেতু ঘিরে হংকংয়ের আদলে নগর গড়ার পরিকল্পনার কথাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাওয়া ও জাজিরার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় বিপুল কর্মযজ্ঞ। দেশি-বিদেশি হাজার হাজার শ্রমিক ও প্রকৌশলীদের দারুণ ব্যস্ততা প্রকল্প এলাকাজুড়ে।
এতোদিন টেস্ট পাইলিং চললেও শনিবার শুরু হবে মূল পাইলিং। এজন্য নদীতে জড়ো করা হয়েছে বিশাল বিশাল ক্রেন, ড্রেজার।
নদী শাসনের জন্য চলছে মাটি ভরাটের কাজ, তীরে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে ব্লক।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মামুন-অর-রশিদ সাংবাদিকদের জানান, সেতুর ৪২টি পিলারের মধ্যে ৭ নম্বর পিলারের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে, যার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে হেলিকপ্টারে করে জাজিয়ায় পৌঁছাবেন প্রধানমন্ত্রী।
সেতু নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের উদ্বোধন করার পর বেলা আড়াইটায় মাওয়ায় জনসভায় ভাষণ দেবেন।
১৯৯৮ সালে আওয়ামী সরকার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়ই পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তা শুরু হতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ফিরে পুনরায় পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে আসে বিশ্ব ব্যাংক।
কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে থাকে। ২০১০ সালের জুলাইয়ে সেতু নির্মাণের জন্য প্রাক-যোগ্যতা দরপত্র মূল্যায়ন করে পাঁচ দরদাতাকে বাছাই করে তা বিশ্ব ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য পাঠানো হলেও সংস্থাটি তা ঝুলিয়ে রাখে।
এরপর পদ্মা সেতুতে ‘সম্ভাব্য’ দুর্নীতির’ অভিযোগ আনে বিশ্ব ব্যাংক। দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়।
শেষ পর্যন্ত নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের জুনে চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে মূল সেতু নির্মাণের কাজ এবং সিনো হাইড্রো করপোরেশনকে নদী শাসনের কাজ দেওয়া হয়।
উপ-প্রেস সচিব মামুন বলেন, “শেখ হাসিনা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের জাল ছিঁড়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবতায় রূপ দিয়েছেন। এ যেন দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রকারী কাবুলিওয়ালাদের বিরুদ্ধে নিখাঁদ-খাঁটি দেশপ্রেমের চ্যালেঞ্জের বিজয় দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।”