মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

এমডিজির মতো এসডিজি অর্জনের পথে বাংলাদেশ

যা যা মিস করেছেন

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশন ও এর সাইডলাইনে বিভিন্ন বৈঠকের পাশাপাশি ‘পিপল এন টেক ফাউন্ডেশন’র উদ্যোগে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা’র (এসডিজি) আলোকে গুরুত্বপূর্ণ এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

‘বাংলাদেশ : রোড টু এসডিজি, দ্যা রোল অব ইনফরমেশন টেকনোলজি টু অ্যাচিভ দ্য গোল উইদিন ২০৩০’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের এ সেমিনারে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিপল এন টেক’র সিইও এবং পিপল এন টেক ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে অনেক বাধা রয়েছে। এসব বাধা অতিক্রম করতে হলে মানুষকেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আর এজন্য দরকার মানুষের ক্ষমতায়ন।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, ২০১১ সালে তিনি জাতিসংঘের সেকেন্ড কমিটির চেয়ারম্যান থাকার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবে ‘পিপলস অ্যাম্পাওয়ারমেন্ট : ম্যান এ্যান্ড উইম্যান’ পাশ হয়েছিল। ড. মোমেন বলেন, ‘মানুষকে যদি ক্ষমতায়ন করতে হয় তাহলে কয়েকটি বিষয় অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। প্রথমত, দারিদ্র দূরীকরণ, গুণগত প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি শিক্ষা, যারা অবহেলিত, বৈষম্যের শিকার তাদের অন্তভর্‚ক্তিকরণ প্রভৃতি।’ তিনি জানান, এসব বিষয়ে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসডিজিস বিষয়ক সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ। ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে তিনি টেকসই উন্নয়ন কি, কিভাবে তা অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ তা তুলে ধরেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘১৭টি অভিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে বেশিরভাগই অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বাকিগুলোও অর্জনের পথে রয়েছি আমরা। এর মধ্যে দুয়েকটি লক্ষ্য বাংলাদেশের সাথে সরাসরি যুক্ত নয়।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে ২০৩০ সালের আগেই এসডিজিস (সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্ট গোলস) বাস্তবায়নে সক্ষমতা অর্জন সম্ভব। যেমনটি ঘটেছিল এমডিজির ক্ষেত্রে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গোটা জনগোষ্ঠি আজ উন্নয়নে সম্পৃক্ত।’

স্বাগত বক্তব্যে পিপল এন টেকের প্রতিষ্ঠাতা সিইও ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপ জাতিসংঘের ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও এসডিজিস বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মানুষের ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে প্রস্তাব জাতিসংঘে পাশ হয়েছে, পিপল এন টেক দেশে- বিদেশে সেই ক্ষমতায়নেরই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার হানিপ জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ হাজার মানুষকে আইটি ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দিয়ে উন্নত বেতনে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে পিপল এন টেক। যাদের বেশির ভাগই আগে অড জব করতেন। তারা এখন বছরে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ ডলার বেতনে চাকরি করছেন।

উল্লেখ্য, ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার রাতে নিউইয়র্ক সিটির লং আইল্যান্ড সিটিতে প্রতিষ্ঠানটির ক্যাম্পাসে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন বিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমীন, সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারম্যান সেকিল চৌধুরী এবং বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট রেজাউল করিম রেজনু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ও টিভি উপস্থাপক হাসানুজ্জামান সাকী।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পিপল এন টেকের সাবেক দুই শিক্ষার্থী মারুফ আহমেদ ও ইসরাত জাহান ইভা। অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে তাদের সফলতার গল্প শোনান তারা। সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। সেমিনারের স্ট্রেটেজিক পার্টনার ছিল এরআরবি কানেক্ট।

১৯৮৭ সালে টেকসই উন্নয়নের ব্যাপারটা প্রথম আলোচনায় আসে ব্রুন্টল্যান্ড কমিশনের রিপোর্টে। ২০০০ সালে শুরু হওয়া ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’ বা এমডিজি অর্জনের সময় শেষ হয় ২০১৫ সালে। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনে সফলতা দেখিয়েছে। এরপর জাতিসংঘ ঘোষণা করে ১৫ বছর মেয়াদি ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস’ বা এসডিজিস। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য পূরণ করতে হবে।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা হলো ১. দারিদ্র্য বিমোচন ২. খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টির উন্নয়ন ও কৃষির টেকসই উন্নয়ন ৩. সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা ৪. মানসম্পন্ন শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ ৫. লিঙ্গ সমতা ৬. সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ৭. সকলের জন্য জ্বালানি বা বিদ্যুতের সহজলভ্য করা ৮. স্থিতিশীল ও অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণকালীন উৎপাদনমূলক কর্মসংস্থান ও কাজের পরিবেশ ৯. স্থিতিশীল শিল্পায়ন এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করা ১০. দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তঃরাষ্ট্রীয়বৈষম্য হ্রাস ১১. মানব বসতি ও শহরগুলোকে নিরাপদ ও স্থিতিশীল রাখা ১২. সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার ১৩. জলবায়ু বিষয়ে পদক্ষেপ ১৪. টেকসই উন্নয়নের জন্য সাগর, মহাসাগর ও সামুদ্রিক সম্পদ সংরক্ষণ ও পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিত করা ১৫. ভ‚মির টেকসই ব্যবহার ১৬. শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সকলের জন্য ন্যায়বিচার, সকল স্তরে কার্যকর, জবাবদিহি ও অংশগ্রহণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং ১৭. টেকসই উন্নয়নের জন্য এ সব বাস্তবায়নের উপায় নির্ধারণ ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের স্থিতিশীলতা আনা।

এসব লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১০টিরও বেশি বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অর্জন করেছে। বাকিগুলো অর্জনের পথে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security