সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

শিকড়ের সন্ধানে পশ্চিম বঙ্গ থেকে গাইবান্ধায় ছুটে এসেছেন কমল রায় 

যা যা মিস করেছেন

তাসলিমুল হাসান সিয়াম:

কমল কৃষ্ণ রায় পেশায় একজন কলেজের শিক্ষক‌। চাকুরী করেন পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির একটি সরকারি স্কুল এন্ড কলেজে পাশাপাশি সাহিত্য নিয়ে তার আগ্রহের কমতি নেই । কোলকাতার বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করে বেশ খ্যাতিও কুড়িয়েছেন । তার আঞ্চলিক ভাষায় রচিত কবিতা গুলো পড়লে মনে হবে তিনি বেড়ে উঠেছেন আমাদের রংপুর অঞ্চলে কিন্তু না , মা কিরন বালা রায়ের মুখ থেকে শুনে তিনি এসব ভাষা রপ্ত করেছেন । কমলের মা’র আদি বাড়ি গাইবান্ধার কাজল ঢোপ এলাকায়। কিরন বালার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে কাজল ঢোপে ।কমল রায়ের মা কিরন বালার দেশ বিভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭ এর পরেই কিশোর বয়সে বিয়ে হয় পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারের দিনহাটায় । এরপর সেখান থেকে আর আসা হয়নি । কমলের মায়ের মুখ থেকে প্রায়ই তার‌ শৈশব কালের গল্প শুনতেন । কমল রায়ের পিতা ছিলেন রাজবংশী তাই তাদের ভাষায় কোচবিহারের বিশেষ আঞ্চলিকতা থাকলেও ব্যতিক্রম হয়েছিল কমলের কথ্য ভাষায় । মায়ের মুখ থেকে শোনা ভাষার প্রভাব পড়ে কমলের উপর । তিনি এখনো কথা বলেন আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ভাষায় । তাই মাতৃভাষার শিকড়ের সন্ধানে নিজের আত্নীয়দের খোঁজে গাইবান্ধা এসেছেন । গাইবান্ধা জেলা সম্পর্কে তার ধারণা না থাকায় সাহায্য চেয়েছেন গাইবান্ধা জেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ঘাঘট পত্রিকার সম্পাদক আব্দুস সামাদ সরকার বাবু ভাইয়ের কাছে । অতঃপর বাবু ভাই আমাকে বলে উনার সাথে কাজল ঢোপ গ্রামে যেতে হবে । সকাল ১০ টায় গাইবান্ধা জেলা শহরের নিউ স্কাই ভিউ হোটেলে যাই কমল‌ রায়কে নেওয়ার জন্য ।ওখান থেকে সরাসরি আমরা গেলাম দৈনিক ঘাঘট পত্রিকার অফিসে । বাবু ভাইয়ের সাথে খোশ গল্প করে আমরা দুইজন বের হলাম কাজল ঢোপ গ্রামের উদ্দেশ্যে । গাইবান্ধা শহর থেকে চার কিলোমিটার পশ্চিমে বল্লমঝড় ইউনিয়নের কাজল‌ ঢোপ গ্রাম নানা বাড়ির সঠিক ঠিকানা জানা নেই কমল রায়ের তার মায়ের মুখে শোনা কয়েকজন ব্যক্তির নাম শুধু জানেন তিনি । রাজেন মালি ও কলি বিশ্বাসের নাম ছাড়া আর কোন নাম জানা নেই তার । কলি বিশ্বাস ছিল কমলের নানা । আমরা গাইবান্ধা- সাদুল্লাপুর সড়কের ফোরকানিয়া বাজারে কিছু লোকের সহযোগিতায় মালিপাড়া রাজেন্দ্র মালির বাড়িতে গেলাম । কিন্তু সেখানে উপস্থিত কিছু প্রবীণ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক বললেন কলি বিশ্বাস তো বহু আগেই মারা গেছেন এমনকি তাদের কোন বংশধরাও এখানে আর থাকে না । প্রবীণ বৃদ্ধ সুভাষ মন্ডল‌কে নিয়ে আমারা এবার ছুটলাম কমলের নানার বাড়ির উদ্দেশ্যে । সাদুল্লাপুর সড়কের পাশেই ছিল কমলের নানা বাড়ি । একসময়ের প্রতিবেশী ৮৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মোহন বিশ্বাস জানান তার নানা কলি বিশ্বাস অনেক আগেই পরলোকগমন করেন দেশ স্বাধীনের পর তার ছেলেরা এসব জায়গা ছেড়ে কোথায় গিয়েছিল তা জানা নেই তাদের । মায়ের ছেলে বেলা কেটেছে এই এলাকায় এটা দেখে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন কমল । কথা হয় ললিতা রাণীর সাথে তিনি জানান তার শ্বাশুড়ির সরলার সাথে কমলার মায়ের ছোট বেলায় বেশ সখ্যতা ছিল ।এসব কথা বলার সময় কমল রায় তার হাত থাকা স্মার্ট ফোনে রেকর্ড করছিলেন ।

কথা বলতে বলতে ট্রেনের সময় হয়ে হয়ে আসছিলো ।তাই আমরা কাজল ঢোপকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম গাইবান্ধা রেলওয়ে স্টেশনের দিকে । কমল রায়ের গন্তব্য এবার লালমনিরহাটে সেখানে এক বাল্য বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ফিরে যাবেন স্বদেশে । মানুষ হিসেবে কমল রায় বেশ আন্তরিক ও মার্জিত । মাত্র ৫ ঘন্টায় আমাকে বেশে আপন করে নিয়েছেন । তাই ভারত ভ্রমণের নিমন্ত্রণ করতে ভোলেনি। আমি যেন খুব দ্রুত পাসপোর্ট ভিসা করে উনার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করি । কথার এক পর্যায়ে সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা দোলনচাঁপা ট্রেনটি স্টেশনে পৌঁছালো । আমি তাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিদায় জানাতেই তিনি বলল আমি কি আল্লাহ হাফেজ বলতে পারি । আমি একটু মুচকি হেসে বললাম জ্বি বলতে পারেন ।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security