বুধবার, মে ১, ২০২৪

কুড়িখাই মেলাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুত দাসেরগাঁওয়ের বিন্নি ধানের খৈ

যা যা মিস করেছেন

মিয়া মোহাম্মদ ছিদ্দিক,কটিয়াদী(কিশোরগঞ্জ)
আর মাত্র ১০দিন বাকি কটিয়াদীরের ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। আর মেলাকে কেন্দ্র করে ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন সামগ্রীর। তেমনি গ্রাম-বাংলার কৃষ্টি আর ঐতিহ্য বিন্নি ধানের খৈ খাদ্য সামগ্রী।এ গ্রামীণ মেলায় এই খৈ এর যেন বিকল্প নেই। শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় উন্নত মানের বিন্নি ধানের খৈ তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দাশের গাঁও গ্রামের শতাধিক পরিবার। এ গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা বিন্নি ধানের খৈ ভাজা। এখানকার খৈ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। খৈ ভেজেই চলে গ্রামবাসীর ভরণ-পোষণ। এ পেশাই সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে।
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের পাখিডাকা ও ছায়াঢাকা সুনিবিড় এ পল্লীর মেঠো পথ ধরে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে গ্রামবাসীর এক ভিন্ন রকম কর্মতৎপরতা। পল্লীর পরতে পরতে মিশে আছে বিন্নি ধান আর ধান থেকে তৈরি খৈ এর গন্ধ। প্রতিটি বাড়িতে চোখে পড়বে বিন্নি ধানের খৈ ভাজার নানা আয়োজন। বিন্নি ধানের খৈ ভাজার নান্দনিক ছন্দে মিশে আছে এ গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়,দাসের গাঁও গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষের পেশাই খৈ ভাজা ও বিক্রি। প্রতিটি বাড়িতে জ্বলন্ত চুলায় গরম বালুতে বিন্নি ধানের চাল থেকে খৈ ভাজছেন নারীরা। বড়দের কাজে হাত লাগাচ্ছে শিশুরাও এতে বাদ যায়নি স্কুল ও কলেজ পড়–য়া ছাত্রছাত্রীরা। প্রায় ১২০ বছর ধরে গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় জড়িত এ পেশায়। জেলার বড় বড় গ্রামীণ মেলা ছাড়াও এখানকার বিন্নি ধানের খৈ যাচ্ছে দেশের নানা স্থানে। খৈ ভেজেই দিন বদলেছে অনেকের। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মেলা বন্ধ থাকায় কিছুটা দূরাবস্থায় পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।প্রতিদিন ১টি পরিবার এক মণ করে খৈ ভাজতে পারে। বাজারে প্রতিমণ খৈ বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। প্রতি মৌসুমে এ গ্রাম থেকে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকার খৈ।

দাশেরগাঁও গ্রাামের কারিগর জয়নাল মিয়া বলেন,আমার বাপ-দাদারা খৈ ভেজে সংসার চালাতেন। আমরাও এ পেশায় জড়িত ৫০ বছর ধরে।

ষাটোর্ধ্ব মল্লিকা বেগমের কাছে বিন্নি খই তৈরির কৌশল জানা যায়, প্রথমে কাঁচা ধানকে ৫-৭ দিন রোদে শুকিয়ে তা থেকে চাল করা হয়। সেই চাল কয়েকবার ভালো করে ধুয়ে সুতি কাপড়ের সাহায্যে শুকানো হয়। এরপর মাটির চুলায় লোহার কড়াইয়ে বালু দিয়ে তা উত্তপ্ত করা হয়। বালু গরম হলে এর মধ্যে বিন্নি চাল দিয়ে বাঁশের কাঠির ঝাঁটা দিয়ে নাড়তে হয়। নাড়ার একপর্যায়ে তৈরি হয় বিন্নি খই। অন্য ধানের খই আগুনের তাপে ধান ফেটে তৈরি হয়। কিন্তু বিন্নি খই চাল ভেজে তৈরি করা হয়। এই খই আকারে ছোট,রং ধবধবে সাদা। মুখে দিলে গলে যায়, স্বাদেও অতুলনীয়।

গৃহবধূ মনিরা বলেন,বিয়ের পর শাশুড়িকে খৈ ভাজতে দেখেছি। এখন আমিও ভালো খৈ ভাজতে পারি। এতে পরিশ্রম হলেও ভালো লাভ হয়।কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মেলার মৌসুমে খৈ ভাজার ধুম পড়ে। দেশের নানা এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে আসেন খৈ কিনতে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান,উন্নত মানের এই বিন্নি খৈ এর কদর সবখানেই অনেক বেশি। সামনে আমাদের কুড়িখাই মেলা। এ মেলাকে উদ্দেশ্য করে আমরা সবাই প্রস্তুতি নিচ্চি। তবে পুঁজির অভাবে অনেক কারিগর স্বাচ্ছন্দ্যে এ পেশা চালাতে পারছেন না।

কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান বলেন,এটি আমাদের এলাকার একটি পুরোনো ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য আমাদের বাচিয়ে রাখতে আমরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security