বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

যানজট ও তীব্র গরমে কাহিল রোজাদাররা

যা যা মিস করেছেন

রমজানের দ্বিতীয় দিনেও যানজটে অতিষ্ঠ নগর জীবন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানজট ও তীব্র গরমে কাহিল হয়ে পড়েছেন রোজাদাররা। সকাল থেকেই অফিসগামী মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অসহনীয় যানজটে ভুগতে হয়েছে। বিভিন্ন সড়ক উন্নয়নে মেগ প্রকল্পের কাজ চলছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সড়কে গণপরিবহণ ও ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ার কারণে যানজট বাড়ছে। ফ্লাইওভারগুলোতেও দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। অফিসফেরত যাত্রীদের ব্যক্তিগত গাড়ি কিংবা গণপরিবহনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। গলির রাস্তাগুলোতেও দেখা গেছে রিকশা জট।

গতকাল রোজার দ্বিতীয় দিনে বিকেলে অফিস টাইম শেষ হওয়ার পর থেকে সড়কে যানবাহনসহ মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সবার চেষ্টা ইফতারিতে পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সে কারণেই প্রথম রোজার মতো গতকালও ইফতারির আগে রাজধানীজুড়ে দেখা গেছে তীব্র যানজট।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, রোজার দ্বিতীয় দিনেও স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সবই খোলা। সবাইকে সকাল থেকেই বাইরে বের হতে হয়েছে। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহনের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে মানুষের চরম দুর্ভোগ হয়। যানজটে আটকা পড়ে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। প্রয়োজনীয় কাজে বাইরে বের হয়ে অনেককেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতে হয়েছে রাস্তায়। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে ঢাকার অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল আটকে যায়। ইফতারের পূর্বে কর্মস্থল থেকে ঘরমুখী মানুষরাও পড়েন মহাবিপাকে। ইফতারের কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান প্রধান সড়কে যানজট এতই তীব্র হয়েছে যে, গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করে রেখেছেন চালকরা। অনেকেই পরিবহন সঙ্কটে পড়েছেন। ফলে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। আবার কেউ কেউ যানজটে আটকা পড়ে ইফতার করেছেন সড়কে, বাসে কিংবা ফুটপাথে।

এফডিসি ক্রসিং থেকে বাংলাদেশ বেতার পর্যন্ত ছিল সবচেয়ে বেশি জটলা। বাংলাদেশ বেতার থেকে হাতিরঝিল হয়ে মগবাজার আসার পথেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে রোজাদারদের। শুধু হাতিরঝিল নয়, বনানী ও গুলশান, বাড্ডা, নতুনবাজার, মহাখালী, কুড়িল, মৌচাক, রামপুরা, খিঁলগাও, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট ও মিরপুর এলাকায় ছিলো যানজট। অফিস ছুটি ও পরিবারের সঙ্গে কর্মজীবীদের ইফতারি করার তাড়ার কারণেই সড়কে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এগুলোর মধ্যে মেট্রো রেলের কাজ চলছে উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর রোকেয়া সরণি হয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, পল্টন, মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত সড়কে। এ কারণে রাস্তাগুলো অনেকটা সরু হয়ে গেছে। এই সরু রাস্তায় যানবাহন চলাচল খুব ধীরগতিতে হচ্ছে।এদিকে, মহাসড়ক ছাড়া দেশের সর্বত্র ইজিবাইক ও থ্রি-হুইলার চলাচলের অনুমতিতে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া আদেশে স্বস্তি প্রকাশ করেছে রিকশা, ব্যাটারি রিকশা ও ইজিবাইক চালক সংগ্রাম পরিষদ। একইসঙ্গে সংগঠনটি সড়ক-মহাসড়কে বিকল্প লেনের দাবিও জানিয়েছে। গতকাল পরিষদের আহ্বায়ক খালেকুজ্জামান লিপন ও সদস্য সচিব প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমনের পাঠানো বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, সারাদেশের চালক, মেকানিক, ক্ষুদে মালিক, গ্যারেজ মালিকসহ প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ইজিবাইকসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। এর সঙ্গে তাদের উপর নির্ভরশীল প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি মানুষ। সুপ্রিম কোর্টের এ আদেশ তাদের জীবনে সাময়িক স্বস্তি আসলেও পুরো সঙ্কট নিরসন হবে না। দেশের সড়ক-মহাসড়কসমূহ জেলা-উপজেলাসহ বাজারের পাশ দিয়ে বা উপর দিয়ে গিয়েছে। ফলে গণপরিবহন না থাকায় ইজিবাইক, রিকশাসহ ব্যাটারিচালিত যানবাহন ছাড়া এ সমস্ত স্থানে চলাচল করা অত্যন্ত কঠিন। মহাসড়কে ইজিবাইকসহ স্বল্প গতির ও লোকাল যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন বা সার্ভিস রোড নির্মাণ না করলে সড়ক-মহাসড়কে সার্বিক শৃঙ্খলা যানজট নিরসন করা যাবে না।

বেসরকারি চাকরিজীবী সৈকত বলেন, বিভিন্ন রাস্তায় চলছে উন্নয়ন কাজ। একারণে অনেক রাস্তা ছোট হয়ে গেছে। প্রতিদিন রাজধানীর সব রুটেই তীব্র যানজট দেখা যায়। এই যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। যানজট নিরসনে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। সড়কে ফিটনেস, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রিশন ছাড়া যানবাহনও চলছে। গরম ও যানজটে বসে থাকতে অস্থির লাগে। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারি না।

আবু সালেহ নামের এক শিক্ষক বলেন, রমজানের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখায় বেশি যানজট সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন তাদের অভিভাবকরা। তারা তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি রাস্তায় রেখে যানজট সৃষ্টি করছে। অনেক অভিভাবককে গাড়ি সরাতে বললে খারাপ ব্যবহার করেন। ক্ষমতা দেখান। আর উন্নয়নের নামে রাস্তা কেটে বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। একারণেও যানজট দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

এক ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষ একই সময় বাসা থেকে বের হওয়ার কারণে গাড়ির চাপ বাড়ছে। কোন কোন এলাকায় রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে গাড়ি থেকে যাত্রী উঠা নামা করান। পণ্য পরিবহনের গাড়িগুলো রাস্তার উপরই থামিয়ে পণ্য খালাসের কাজ করছেন এতে করে যানজট সৃষ্টি হয়।

বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রমজানের সময় বেশি তৎপর হতে হবে। রাস্তার মোড়গুলোতে গাড়ি যেন আটকা না পড়ে সে ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শুধু অভিযান সর্বস্ব হলে চলবে না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security