বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

কঠিন শাস্তি হতে পারে সুয়েজ খাল আটকানো জাহাজের ভারতীয় নাবিকদের

যা যা মিস করেছেন

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান পথ সুয়েজ খাল আটকে রাখা জাহাজ ‘এভার গিভেন’ অবশেষে আবার ভেসেছে ঠিকই, কিন্তু ওই জাহাজের ২৫ জন ভারতীয় নাবিকের জন্য অপেক্ষা করছে চরম অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ।

জাহাজটি কেন সুয়েজে আটকে গিয়েছিল, তা নিয়ে মিশর কর্তৃপক্ষ এখন আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে।

ওই বিশালাকার কার্গো জাহাজটি জাপানের মালিকানাধীন, পানামার পতাকাবাহী এবং তাইওয়ানের একটি কোম্পানি ‘এভারগ্রিন’ দ্বারা পরিচালিত হলেও জাহাজের ক্যাপ্টেন-সহ নাবিকদের সবাই ছিলেন ভারতীয় নাগরিক।
সুয়েজ খালের ওই দুর্ঘটনার পর ভারত সরকার তাদের সবার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশ্বস্ত করেছে যে ওই নাবিকদের সুরক্ষার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেন বা অন্য নাবিকদের পরিচয় তারা এখনও প্রকাশ করেননি।

যদিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ওই পঁচিশ জন নাবিকের বেশির ভাগই ছিলেন ভারতের তেলেঙ্গানা, কেরালা বা তামিলনাডু রাজ্যের বাসিন্দা। ক্যাপ্টেন নিজেও একজন দক্ষিণ ভারতীয়।

এখন ভারতের শিপিং ইন্ডাস্ট্রি বা জাহাজ চলাচল শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা অনেকেই মনে করছেন, সুয়েজের ওই দুর্ঘটনার জেরে ভারতীয় নাবিকদের ফৌজদারি চার্জের মুখোমুখি হতে হবে।

ইতোমধ্যেই ওই পঁচিশ জন নাবিককে সুয়েজে ‘গৃহবন্দী’ রাখা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সুয়েজ খালে কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত তাদের দেশ ছাড়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

ভারতে মার্চেন্ট নেভি অফিসারদের বৃহত্তম সংগঠন ‘দ্য মেরিটাইম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া’র একটি পদস্থ বলেন, “আসলে সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির নিজস্ব কিছু আইনকানুন আছে, যা আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বা সমুদ্র আইনের চেয়েও অনেক বেশি কড়া!”

তিনি বলেন, যেমন ধরুন, যখনই কোনো জাহাজ ওই ক্যানালে প্রবেশ করবে তার আগে থেকেই অথরিটির নিজস্ব দু’জন পাইলট জাহাজে উঠে দায়িত্ব নেবেন এবং পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কিন্তু তারপরও জাহাজ যদি কোনও দুর্ঘটনায় পড়ে সে ক্ষেত্রে তার দায় কিন্তু জাহাজের ক্যাপ্টেনের ওপরই বর্তাবে, ওই পাইলটদের ওপর নয়।

ভারতের শিপিং ইন্ডাস্ট্রির তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই কারণেই দুর্ঘটনার দায় শেষ পর্যন্ত ভারতীয় নাবিকদের ওপরেই পড়ার একটা আশংকা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ মার্চ সকালে এভার গিভেন যখন সুয়েজ খাল ধরে এগোচ্ছিল, তখন প্রবল ধূলিঝড় আর জোরালো বাতাসে জাহাজটির অভিমুখ বেঁকে যায় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায় এবং সেটি খালকে আড়াআড়িভাবে আটকে দেয়।

এর পরিণতিতে প্রায় সাড়ে তিনশো মালবাহী জাহাজ খালের দু’দিকে আটকে পড়ে। বহু জাহাজকে কেপ টাউন হয়ে পুরো আফ্রিকা ঘুরে ইউরোপের দিকে পাড়ি দিতে হয়।

এদিকে ভারতের ন্যাশনাল শিপিং বোর্ডের সদস্য ক্যাপ্টেন সঞ্জয় পরাশর জানাচ্ছেন, ঠিক কীভাবে জাহাজটি ক্যানালকে আটকে দিল তার তো তদন্ত হবেই। এটা সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

তিনি বলেন, এখানে ভারতীয় নাবিকদের দায় কতটা, জাহাজের ‘শিপ ভয়েজ ডেটা রেকর্ডার’ থেকে কথোপকথন শুনলেই তা পরিষ্কার হবে বলে মনে করি।

দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক পি সুশীল রাও ওই জাহাজের ভারতীয় নাবিকদের নিয়ে খোঁজখবর রাখছেন প্রথম থেকেই।

তিনি বলেন, আমি যতদূর জানতে পারছি জাহাজটির জাপানি মালিকদের সঙ্গে সুয়েজ ক্যানাল অথরিটির এই মুহূর্তে আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সেই আলোচনা ফলপ্রসূ হলে এই সঙ্কট হয়তো সহজেই মিটে যাবে এবং ভারতীয় নাবিকরা হয়তো কড়া শাস্তি এড়াতে পারবেন। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত হবে কি না, তা অনেকগুলো ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করছে।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যেই মুম্বাই-ভিত্তিক ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব সিফেয়ারার্স অব ইন্ডিয়া’ এভারগিভেন জাহাজের সব ভারতীয় নাবিকের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবদুলগনি সেরাং টুইট করেছেন, আমি ওই নাবিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা সুস্থ আছেন, কিন্তু প্রচণ্ড চাপের মুখে আছেন। তবে তারা এই বিপদে একা নন। যখনই দরকার হবে এবং যেভাবে দরকার হবে, আমরা তাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।

ওই নাবিকদের আইনি সুরক্ষা দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কূটনৈতিক চ্যানেলে অনানুষ্ঠানিকভাবে মিশরের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security