শুক্রবার, জুন ৭, ২০২৪

বনের জমি দখলে শীর্ষ দশে আ’লীগের এমপি দবিরুল

যা যা মিস করেছেন

দেশের বনভূমি অবৈধভাবে দখলে রাখা শীর্ষ ১০ জনের তালিকা তৈরি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এই তালিকায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য দবিরুল ইসলামের নাম। তিনি সপ্তমবারের মতো জাতীয় সংসদে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বনের ভূমি দখলকারীদের টপ টেনের মধ্যে তার নাম রয়েছে দুই নম্বরে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, সারাদেশের সংরক্ষিত বনভূমির মধ্যে এক লাখ ৩৮ হাজার ৬১৩ একর জবরদখলে রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী স্থাপনাসহ প্রতিষ্ঠিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮২০ একরে। অবৈধ দখলদারের সংখ্যা ৮৮ হাজার ২১৫ জন। এই তালিকা প্রায় পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার।

মন্ত্রণালয় বলছে, এটাই জবরদখলকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা। মাঠ পর্যায়ের সব বন বিভাগ থেকে সংরক্ষিত বনভূমিতে জবরদখলের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ২২ নভেম্বর বন মন্ত্রণালয় থেকে বিভাগীয় কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে এসব জবরদখল করা ভূমি উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের বন কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর দুই হাজার ৯৭১টি উচ্ছেদ প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এক সময়ে সিপিবির এমপি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের দবিরুল ইসলামের দখলে রয়েছে ৭২ দশমিক ৫৫ একর বনভূমি। এই জমিতে চা বাগান ও চাষাবাদ করা হচ্ছে। ঘরবাড়িও তৈরি করা হয়েছে। দক্ষিণপাড়িয়া মৌজার অর্ধশতাধিক দাগ উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিবেদনে বলছে, এই জমির মাঠ পর্চা বন বিভাগের নামে। অনেক আগ থেকেই তিনি এই জমি দখল করে রেখেছেন। তাকে উচ্ছেদ করার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে বন বিভাগ থেকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য দখলদারদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা হলেও দবিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে বন বিভাগ কোনো মামলা করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দবিরুল ইসলাম বলেন, এই তালিকার সংবাদ তার জানা নেই। স্থানীয় বন অফিস বা প্রশাসনের কেউ কখনও তার কাছে এমন কিছু দাবি করেননি। কীভাবে তালিকায় তার নাম এলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনীতি করলে নানা ধরনের পক্ষ-বিপক্ষ থাকে। কেউ হয়তো বিদ্বেষপূর্ণভাবে তার বিরুদ্ধে এই তালিকায় নাম উঠিয়েছে। দবিরুল ইসলাম দাবি করেন, দলিল সূত্রে কিনে এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরেই তারা ভোগদখলে রয়েছেন। সেখানে চা বাগান রয়েছে। তিনি বলেন, ওই এলাকায় বন বিভাগের কোনো অফিস নেই, জমি বা গাছ কিছুই নেই।

শীর্ষ ১০ বন দখলকারীর মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে জনৈক মাহমুদুল হক মাঝি। তার বাবার নাম তজু মিয়া। কক্সবাজারের চকরিয়ার লম্বখালীর বাসিন্দা মাহমুদুল হক মাঝির দখলে স্থানীয় রামপুরা মৌজার ৩১৫ একর জমি। এই জমিতে তিনি চিংড়ি চাষ এবং লবণ মহালের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে বন আইনে দুটি মামলা চলমান রয়েছে।

বনের জমি শীর্ষ ১০ জবরদখলকারীর মধ্যে তিন নম্বরে রয়েছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের মো. কামাল হোসেন। স্থানীয় ঢালার পাড়ের মুলুক মিয়ার ছেলে এই কামাল হোসেন মেঘারগাঁও মৌজার তিনটি দাগে ৫৬ একর জমি দখল করেছেন। তাকে উচ্ছেদের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। শুরুতে তিনি জমি দখলের কথা পুরোপুরি মিথ্যা বলে জানালেও এক পর্যায়ে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার দখলে থাকা জমির পরিমাণ মাত্র এক একর ৫০ শতক।

একই এলাকার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে হূপা মিয়ার নাম রয়েছে জবরদখলকারীর চার নম্বরে। একই মৌজায় দুই দাগে তিনি দখল করেছেন ৫৫ একর জমি। তার বিষয়েও উচ্ছেদের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে বন বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের সতি হাওর এলাকার আক্রাম আলীর ছেলে ইউসুব আলীর নাম রয়েছে তালিকার পাঁচ নম্বরে। তার দখলে রয়েছে ৫০ একর জমি। এই জমিতে তিনি কৃষিকাজের পাশাপাশি ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছেন। তবে  তিনি একবার দাবি করেছেন, তার এক ছটাক জমিও নেই। তার বিরুদ্ধে বন বিভাগের কোনো মামলাও নেই। পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেছেন, তার মতো অনেকের দখলে বনের জমি রয়েছে। তিনি উল্টো প্রশ্ন করেন বন বিভাগের তালিকায় কেন শুধু তার নাম?

বন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রতিবেদনে ছয় নম্বরে রয়েছে সিলেটের গোয়াইনঘাটের বুধিরগাই এলাকার মো. শুকুর আলী। মৃত খাদিম আলীর ছেলে শুকুরের দখলে রয়েছে বুধিগাঁও হাওর মৌজার দুই দাগে ৫০ একর জমি।  তিনি বলেছেন, বন বিভাগের সঙ্গে তার মামলা ২০১৫ সালেই শেষ হয়ে গেছে। তার সঙ্গে এক একর ৫৮ শতক জমি নিয়ে বন বিভাগের বিরোধ ছিল।

শীর্ষ দশের সাত নম্বরে রয়েছেন চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পদুয়া ইউনিয়নের ভদন্ন শরনংকর থের। তার বাবার নাম দিলীপ বড়ূয়া। ফলহারিয়া মৌজায় তিনটি দাগে ৫০ একর জমি জবরদখল করে রেখেছেন তিনি। ওই জমিতে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় ১৭টি মূর্তি, পাকা দালানঘর দুটি, টিনের ঘর দুটি, রান্নাঘর ও গাড়ির গ্যারেজ রয়েছে। বন বিভাগ থেকে জায়গা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তার নামে বন আইনে ও ফৌজদারি আইনে সাতটি মামলা রয়েছে। এমনকি গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে।

তালিকার আট নম্বরে রয়েছেন টাঙ্গাইলের মধুপুরের সাধুপাড়ার প্রশান্ত মানকিন। অরণখোলা মৌজায় তার দখলে রয়েছে ৫০ একর জমি। ওই স্থানে বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং চাষাবাদও করা হচ্ছে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এই জমি তার জবরদখলে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নৃ-গোষ্ঠী বিধায় জবরদখল উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।

নয় নম্বরে রয়েছেন চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার রোস্তমপাড়ার সিংরাজ গং। চুনতি মৌজায় তার দখলে থাকা জমির পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৬৬ একর। বন আইনে তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা করা হয়েছে।

দশ নম্বরে রয়েছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের দিঘলবাক পাড়ের নরেশ বিশ্বাসের ছেলে কল্যাণ বিশ্বাস। তার জবরদখলে থাকা জমির পরিমাণ ৪৫ একর। তার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে বন বিভাগ। তার বিরুদ্ধে বন আইনেও মামলা করা হয়েছে।

এদিকে সংসদীয় কমিটিতে দেওয়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন মোট সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ৩৩ লাখ ৪২ হাজার ৮১৫ দশমিক ১৪ একর। এর মধ্যে পার্বত্য এলাকা, সুন্দরবন, উপকূলীয় এলাকাসহ জরিপ হয়নি প্রায় ২৫ লাখ একরের। সংরক্ষিত বনভূমির রেকর্ডভুক্তির বিষয়ে বন বিভাগের কাছে আংশিক তথ্য রয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বন বিভাগ থেকে বেদখল হওয়া জমির মূল্যমানও নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বেদখল হওয়া ৭৯ হাজার ৯৪ দশমিক ১৯ একর জমির দাম ১০ হাজার ১৯৭ কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৪৯০ টাকা। সবচেয়ে বেশি বেদখল হয়েছে টাঙ্গাইল বন বিভাগের। এ ছাড়া কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বন বিভাগ, দিনাজপুর সামাজিক বন বিভাগ, পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ঢাকা ও মৌলভীবাজার, বান্দরবানের পাল্পউড প্লান্টেশন বিভাগ ও ফেনীর সামাজিক বন বিভাগ। দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোথাও সরকারি হার, কোথাও মৌজা মূল্য আবার কোথাও স্থানীয় বাজারদর আমলে নেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security