বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের গল্পে কাজ করেন বয়োজ্যেষ্ঠ শিল্পীরা। মুখ্য, জটিল আর গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে দেখা যায় তাঁদের। বাংলাদেশে এ রকম চরিত্রে খুব কম শিল্পীকেই দেখা যায়। অথচ অভিজ্ঞতার কারণে শক্তিশালী চরিত্রে কাজ করতেই পারতেন তাঁরা।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়ে নেই নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শাবানা। পরিবার নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। কবরী, ববিতারা দেশে। তবে সেই অর্থে অভিনয়ে পাওয়া যায় না তাঁদের। শবনম শেষবার দেখা দিয়েছেন ১৯৯৯ সালে, আম্মাজান ছবিতে। এরপর ডুব দিয়েছেন তিনিও। একই অবস্থা একসময়ের জনপ্রিয় নায়কদের ক্ষেত্রেও। ফারুক, আলমগীর, উজ্জল, সোহেল রানা, ইলিয়াস কাঞ্চনেরা অভিনয়ে অনিয়মিত। অথচ চাইলে তাঁদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অনন্য সব সিনেমা বানানো সম্ভব। বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের গল্প নিয়ে ছবি হয়। সেখানে মুখ্য, জটিল আর গুরুত্বপূর্ণ সব চরিত্রে দেখা দেন বয়স্ক শিল্পীরা। ৫০ বা ৬০ বছর পেরোনো অভিনয়শিল্পীরাও যেকোনো সিনেমার শক্তিশালী চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন, তা নিয়ে কেউ ভাবেনি, ভাবে না।
তবে কি একসময়ের দাপুটে নায়ক–নায়িকারা চূড়ান্ত অবসরে চলে গেলেন? এমন প্রশ্ন শুনে নায়ক ফারুক জানিয়েছেন, অভিনয়ের বাসনা জেগে আছে তাঁর এখনো। অন্য রকম গল্পের খোঁজ করেন, কিন্তু চমকে দেওয়ার মতো গল্প নিয়ে পরিচালকেরা হাজিরও হন না। তিনি বলেন, ‘একজন শিল্পী মরার আগপর্যন্ত কাজ করতে চায়। যে মনেপ্রাণে আর্টিস্ট, সে অভিনয় ছাড়া বাঁচতে পারে না। যতই অভিনয় করি না কেন, অভিনয়ের ক্ষুধা থেকেই যায়। ঘরে বসে মরে যাওয়ার চেয়ে কাজ করে মরা ভালো।’ প্রায় একই কথা বললেন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী শবনমও। ববিতারও একই আক্ষেপ, ‘তেমন গল্প তো পাই না।
জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পীরাও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিনয় করতে চান। অভিনয়ের ইচ্ছা, মুনশিয়ানা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রস্তুত তাঁরা। দরকার শুধু চমৎকার কিছু গল্প আর প্রযোজক–পরিচালকের উদ্যোগ।
জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের নিয়ে সিনেমা বানানোর বিষয়টি পরিচালকদেরই ভাবতে হবে। একবার কেউ শুরু করলে সেটাকে ছাড়িয়ে যেতে অন্যরাও চেষ্টা করত বলে মনে করেন চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা আরও মনে করেন, চর্চার অভাব, মনোজগতের সীমাবদ্ধতা, বৈচিত্র্য খোঁজার মানসিকতা না থাকায় বয়স্ক শিল্পীদের নিয়ে গল্প ভাবতে পারেন না তাঁরা। বলিউডে শ্রীদেবী, ইরফান খান, ঋষি কাপুরেরা কাজ করতে করতেই মারা গেছেন। বাংলাদেশে এখন যাঁরা জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী, তাঁরাও অভিনয়টা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত করতে চান। অভিনয়ের ইচ্ছা, মুনশিয়ানা আর অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রস্তুত তাঁরা। দরকার শুধু চমৎকার কিছু গল্প আর প্রযোজক–পরিচালকের উদ্যোগ।