দেশে প্রায় তিন মাসের মজুদ থাকলেও হঠাৎ করে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভারত সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করার পরপরই পেঁয়াজের এ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের প্রধান পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও মানিকগঞ্জে বর্তমানে পেঁয়াজের মজুদের পরিমাণ ৫ লাখ ২৫ হাজার টন। তবে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মৌসুম আসতে এখনও ছয় মাস বাকি। এই সময়ে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১১ লাখ টন।
কমিশনের এ হিসেবে দেখা যায়, আগামী প্রায় তিন মাসের পেঁয়াজ মজুদ আছে। বাকি তিন মাসের পেঁয়াজ আমদানি করেই মেটাতে হবে। অর্থাৎ, মার্চের আগ পর্যন্ত আরও প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির দরকার পড়বে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক প্রতিবেদনে পেঁয়াজের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে ভারতের বিকল্প হিসেবে আটটি দেশের বাজারের সন্ধান করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। দেশগুলো হচ্ছে- মিয়ানমার (বার্মা), আফগানিস্তান, মিসর, তুরস্ক, চীন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান ও নেদারল্যান্ডস।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২৫ লাখ টন। সাধারণত স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ও আমদানির মাধ্যমে পেঁয়াজের চাহিদা পূরণ করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। এর মধ্যে ২২-২৫ শতাংশ সংগ্রহকালীন এবং সংরক্ষণকালীন ক্ষতি বাদ দিলে স্থানীয় উৎপাদিত পেঁয়াজ থেকে বাজারে মোট সরবরাহ করা হয় ১৯ লাখ ১৭ হাজার টন।
এদিকে, সংকট নয়, আশঙ্কায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বাজারের খুচরা বিক্রেতারা জানান, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কেনায় বাধ্য হয়েই তাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে বাজার মনিটরিং জোরদারে ৬৪ জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রদানসহ নয়টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, ইতোমধ্যে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত রফতানি বন্ধের আগেই বিকল্প পাঁচটি দেশ থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন তারা। রফতানি বন্ধের ১১ দিন আগে থেকেই আমদানির এ উদ্যোগ নেন তারা।
জানা গেছে, ভারত যে রফতানি বন্ধ করবে, সে বিষয়টি আঁচ করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য আগেভাগেই গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের উদ্ভিদ সংঘনিরোধ কেন্দ্র জানায়, গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছে ২৪টি প্রতিষ্ঠান। এই পাঁচটি দেশ হলো চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মিশর ও তুরস্ক।
কেন্দ্রের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, গত ১১ দিন ধরে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) নেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আমদানি যাতে দ্রুত হয়, এ জন্য আবেদন করার পর দ্রুতই অনুমতিপত্র দেয়া হচ্ছে।