বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

“যা চাইবে তা ছিনিয়ে নিবে”

যা যা মিস করেছেন

রাজুব ভৌমিক : এই সংসারে নেতিবাচক মানুষের অভাব নাই। আপনার আশেপাশে এরকম অনেক ব্যক্তি আছে যারা প্রতিনিয়ত আপনাকে কিছু ‘না’ করার জন্য সবসময় উৎসাহিত করবে। তারা চাইবে যেন আপনি তাদের মত জীবন-যাপন করুন। আপনি যেন সফল না হোন সে জন্য তারা গোপনে বহু চেষ্টা চালাবে। আপনাকে হয়ত বলবে ‘এটা করা সম্ভব নয় বা এটা কেউ কোন দিন করতে পারে নি।’ অথবা আপনার কাজের সমালোচনা তারা অন্যের সাথে করবে। এতে নিরুৎসাহিত হবেন না। পরিবর্তে তাদেরকে ভুল প্রমাণ করার যুদ্ধে আপনি নামুন। যা পূর্বে করা হয় নি তা আপনাকে বর্তমানে সম্ভব করে দেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে সাফল্যের লম্বা মইটা বেড়ে উঠা অত সহজ নয় কিন্তু সম্ভব। তার জন্য আপনাকে নেতিবাচক লোকদের সকল কথা অবজ্ঞা করতে হবে। সাফল্যের লম্বা মইটিতে উঠতে হলে প্রথমে আপনার পকেট থেকে দুই হাত বের করতে হবে। অনেকে চাইবে যে আপনি যেন তাদের মত পকেটে দুইহাত ভরে সময় কাটিয়ে দিতে। কিন্তু সব ভেড়া একসাথে থাকলেও তারা সবসময় সঠিক পথে চলে না। কেননা ভেড়ার দলে প্রথম ভেড়াটি যেদিকে যায় বাকীরা সেদিকই অনুসরন করে। তাই অন্যেরা যে পথে হাঁটছে আপনাকেও সেই পথে হাঁটতে হবে এমন কোন কথা নাই। অন্যের পথ অনুসরণ না করে নিজে পথ তৈরি করুন।

একটু ভেবে দেখুন। এই মুহূর্তে এমন অনেক লোক আছে যারা খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ-ফুর্তি, বা নাচ-গান করে সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু আবার এমন লোকও আছে যারা প্রতিনিয়ত নিজের আত্মউন্নতির জন্য গভীর সাধনা করে যাচ্ছে। তারা নিয়মিত বই পড়ছে, পরীক্ষা চালাচ্ছে, এবং অনুশীলন করেছে। তারাই একদিন সাফ্যলের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছতে পারবে। মানুষের জীবন বৃথা সময় ব্যয় করার জন্য হয় নি। এই জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত সঠিকভাবে ব্যয় করে জনকল্যানই মানব জীবনের মূল উদ্দেশ্য। ধরুন আপনি একজন সৃষ্টিকর্তা। আপনি দশটি মাছের পোনা সৃষ্টি করে একটি বড় পুকুরে ছেড়ে দিয়েছেন। মাছের পোনাগুলো পুকুরে প্রবেশ করার পর তাদের আশেপাশে এদিক ওদিক করে সময় নষ্ট করে দিচ্ছে। কিছুদিন পর না খেয়ে সব মাছ মারা যায়। অথচ পুকুরের মধ্যভাগে প্রচুর খাবার ছিল। যেহেতু কোন মাছের পোনাই পরিশ্রম করে পুকুরের মধ্যভাগে যেতে চায় নি। তাই সবাই না খেয়ে মারা গেল। যদি অন্তত একটি পোনা পুকুরের মধ্যভাগের খাবারের সন্ধান পেত তাহলে বাকী পোনা মরত না। ঠিক তেমনি মানুষের মধ্যেও কেউ একজন অসম্ভব সাধন করে সাফল্য অর্জন করতে হয় তা না হলে সংসারে অবশিষ্ট মানুষের অস্তিত্ব থাকত না। অন্যের মত আপনি এদিক ওদিক করে সময় নষ্ট করবেন না। তাহলে আপনার সাথে সাথে গোটা জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।

একটি বনের বাঘের কাছে একটি হরিণ শিকার করাটাই তার জন্য সফলতা। বাঘ যখন বনে একটি হরিণ প্রথমে দেখে সে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই কিন্তু হরিণের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তেমনি আপনিও সফলতার ছায়া দেখলে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ছিনিয়ে নিতে হবে আপনার সফলতা। অন্যেরা কি বলছে বা আপনার নামে কি সমালোচনা করছে তা ভাবলে চলবে না। জীবনে আপনার দৃষ্টি শুধু সফলতার উপর রাখা উচিত। বড় সফলতা পেয়ে আবার যেন থেমে না যান। একটি বাঘ মাঝে মাঝে বিশাল ষাঁড় বা মহিষ পর্যন্ত শিকার করতে পারে। শিকারের পর মহিষটা পুরোপুরি খেয়ে শেষ করতে তার বেশ কিছুদিন লাগতে পারে। তাই বলে বাঘটি মহিষ শিকারের পরেরদিন একটি হরিণ শাবক দেখলে সেটাকে অবজ্ঞা করা উচিত হবে না। বাঘটিকে জানতে হবে যে মৃত মহিষটি কয়েকদিন পর পচে ও যেতে পারে বা অন্য জীব বা জন্তু তা খেয়ে ফেলতে পারে। তাই একটি বড় সফলতার পর অন্য সব প্রচেষ্টা বন্ধ করে দিলে চলবে না। সাফল্যের ক্ষুধা সবসময় তীক্ষ্ণ থাকা উচিত। তাতে আপনার বেশি লাভ না হলেও সমাজ বা জাতির লাভ অবশ্যই হবে। যেমন ধরুন—বাঘটি প্রথমে বিশাল এক মহিষ শিকার করলো, পরেরদিন সে আবার একটি হরিণ শাবক শিকার করলো, পরেরদিন সে আবার আরেক প্রাণী শিকার করলো। বাঘটির যদিও প্রতিদিন শিকারের ব্যক্তিগত প্রয়োজন ছিল না কারণ সে মহিষটি খেয়ে বেশ কয়েকদিন কাটিয়ে দিতে পারত। কিন্তু তার সাফল্যের ক্ষুধার কারনে এখন অন্য প্রাণীরা সে মাংসের বা সফলতার ভাগ পাবে। বনের সব বাঘই হিংস্র হয় না। কোন কোন বাঘ বার্ধক্যের চাপে শিকারতো দূরের কথা, উঠে বসতেও পারে না। কিন্তু ঐ বাঘটির সফলতার ক্ষুধার জন্য আজ এই বয়স্ক বাঘটির ক্ষুধা মিটবে।

সমাজ কল্যাণে আমাদের বৃহৎ চিত্রের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই যে সমাজের মানুষই সমাজের কল্যাণে বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজে কেউ কিছু করতে চাইলে অন্যেরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তা না হলে সমাজে মানুষ বেশ সুখে থাকত। একবার চিন্তা করে দেখুন যে একটি সমাজে সবধরনের লোক আছে। যাদের নানা ধরনের গুণ আছে। সবাই যদি সবাইকে সাহায্য করত তাহলে সমাজে দু:খ বলে কিছু থাকত না। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমরা তাই করি না। উপরন্তু—আমরা একে অন্যের ক্ষতি সাধনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি। এজন্য সমাজে সফল ব্যক্তিদের কদর বেশি। কেননা আমরা জানি যে—সমাজে একজন মানুষকে সফল হতে হলে কত সংগ্রাম করতে হয়। তথাপি—আপনাকে সফল হতে হবে। সমাজের শত বাধা আসা স্বত্তেও আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে। মনোবল হারালে কখনো চলবে না। সফলতা পাবার ইচ্ছে থাকলেই শুধু হবে না—সফলতা ছিনিয়ে নেবার ইচ্ছাও থাকতে হবে। তাহলেই সফলতা পাওয়া যেতে পারে।

রাজুব ভৌমিক
নিউইর্য়ক

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security