সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

৩৯ বিলিয়ন ডলারও ছাড়াল বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন

যা যা মিস করেছেন

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় দশ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক কাজী রফিকুল হাসান জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় বাড়ার পাশাপাশি জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার ৩০ কোটি ডলার যোগ হওয়ায় রিজার্ভ এই নতুন মাইলফলকে পৌঁছায়।

মঙ্গলবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মহামারীর সময়ে রিজার্ভে আরেকটি রেকর্ড হল।”

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অগাস্ট মাসের ২৭ দিনে ১৭২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত বছরের পুরো অগাস্ট মাসে ১৪৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল।

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক মাসে এতো বেশি রেমিটেন্স আসেনি। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুনে, ১৮৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৯১ কোটি ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।

এর মধ্য দিয়ে সাত মাস পর বাংলাদেশ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধিতে ফিরে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে দুই দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল রপ্তানি আয়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি কমছিল।

মার্চে দেশে মহামারীর ধাক্কা লাগতে শুরু করার পর এপ্রিলে রপ্তানি আয় কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিটেন্সের চেয়েও কম। এ বছর এপ্রিলে গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছিল ৮৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

মহামারী রোধে চলা বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়; তবে প্রবৃদ্ধি কমেছিল ৬১ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রপ্তানি আয় বেড়ে ২৭১ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে উঠলেও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ২ দশমিক ৫ শতাংশ।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে গত অর্থবছরের যে কোনো মাসের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে পণ্য রপ্তানি থেকে।

মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি শুরু হওয়ার আগের মাস মার্চে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ; যদিও প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।

জুলাই মাসে রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ৩২৪ কোটি ৪৯ লাখ ডলারে। আর সদ্য সমাপ্ত অগাস্ট মাসের প্রথম ৩০ দিনে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৩২৩ কোটি ৮৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার আয় করেছে।

এই ৩০ দিনে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের আগস্টের পুরো মাসের (অগাস্ট মাস ৩১ দিনে) তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। গত বছরের আগস্টে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২২৩ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটির বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। দেশের জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে মার্চ থেকে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় রেমিটেন্সও কমে গিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল থেকে আবার রেমিটেন্সে ঊর্ধ্বগতি চলছে।

রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থবছরে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি অর্থবছরেও একই হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।

রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয়ের পাশপাশি বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা ও এআইআইবির ঋণ সহায়তাও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। গত পাঁচ মাসে (এপ্রিল-অগাস্ট) এই দাতা সংস্থাগুলোর দেওয়া প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা যোগ হয়েছে রিজার্ভে।

গত ৩ জুন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ ৩৪ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ২৪ জুন সেই রিজার্ভ আরও বেড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।

এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই ৩০ জুন রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এক মাস পর ২৮ জুলাই রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের ঘরও অতিক্রম করে।

তিন সপ্তাহ পর গত ১৭ অগাস্ট রিজার্ভ ৩৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানেই তা এবার ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security