যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাজধানীর মোহাম্মদপুরে নির্মিত বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বরাদ্দ ছাড়াই দখল করে আছেন ৩৯ জন।
বরাদ্দ ছাড়া দখলে রাখা ৩৯ জনের মধ্যে আটজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য বলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বৃহস্পতিবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনটি পেয়ে কমিটি দখলদারদের ‘সসম্মানে’ উচ্ছেদের সুপারিশ করেছে।
মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে আবাসিক ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য এই টাওয়ার নির্মাণ করা হয়। এর নাম দেওয়া হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১।
সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাংবাদিকদের বলেন, “সেখানে ৮৪টি ফ্ল্যাট হয়েছে এবং কিছু দোকান হয়েছে। এখানে একটি করে ফ্ল্যাট ও দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা।
“কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমিটিকে জানিয়েছেন, ৩৩ জনকে সেখানে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর বাকিগুলোতে জোর করে উঠেছে। কয়েকজন দুটি করেও ফ্ল্যাট নিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।”
বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা যায়, ৮৪টি ফ্ল্যাটে এখন মোট ৭২ জন রয়েছেন। ৩৯ জন বরাদ্দ ছাড়াই উঠে পড়েছেন, তাদের মধ্যে ৩৩ জনের দখলে রয়েছে আরও ১২টি ফ্ল্যাট। ১১ জন দখলদার আদৌ ফ্ল্যাট বরাদ্দের যোগ্য কি না, সেজন্য আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের মৃত শমশের আলীর ছেলে তারা মিয়া, দক্ষিণ বাড্ডার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে আব্দুস সাত্তার (অন্ধ),মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার মৃত সিরাজ খানের ছেলে আনোয়ার হোসেন বাদল, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে মহিন উদ্দিন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, সে বিষয়ে অধিকতর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিরপুরের দুয়ারীপাড়ার মৃত সুরজত আলী মোল্লার ছেলে আমির হোসেন মোল্লা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, সে বিষয়ে অধিকতর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ থেকেও প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
যশোর জেলার সদর উপজেলার মৃত মোকশেদ আলী মিয়ার ছেলে আব্দুল লতিফ যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, সে বিষয়ে অধিকতর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি রাজউক থেকে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পে ৫ কাঠার প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন।
লালমনিরহাটের কালিগঞ্জের মৃত আক্তার হোসেনের ছেলে মো. শুকুর আলী এবং সুনামগঞ্জের দোয়ারা বাজারে মৃত করম আলীর ছেলে মান্নান আলী পরিত্যাক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বোর্ডের পক্ষ থেকে বাড়ি বরাদ্দের পরেও একটি করে ফ্ল্যাট দখল করে আছেন।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. কুদ্দুছ একটি ফ্ল্যাট দখলে রেখেছেন। তিনি যে যুদ্ধাহত, তা প্রমাণে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বা পরিবারের সদস্য না হয়েও যুদ্ধাহতদের জন্য নির্মিত ফ্ল্যাট ও দোকান দখল করে আছেন পাঁচজন। তারা হলেন, সাভারের আমিন বাজারের মৃত মো. আব্দুল লতিফের স্ত্রী বেগম বছিরন নেসা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের মৃত গোলাম হোসেন তালুকদারের ছেলে আবু ছিদ্দিক, টাঙ্গাইলের নাগরপুরের মৃত মোজাহার আলীর ছেলে মাইনুল হক, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের মৃত আলী মিয়ার ছেলে মো. ফরিদ মিয়া, নরসিংদী সদরের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে সিরাজুল ইসলাম।
বরাদ্দ পাওয়া ফ্ল্যাটের বাইরে আরেকটি ফ্ল্যাট দখল করে আছেন তিনজন। তারা হলেন, চুয়াডাঙ্গার মৃত জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের মৃত মো. হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, বগুড়ার শেরপুরের মো. আবুল হোসেনের ছেলে আবু শহীদ বিল্লাহ।
এই তিনজন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, সে বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত আছে।
বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে নরসিংদী সদরের আবু তাহেরের ছেলে আবদুর রহিমের, তবে তিনি একটি ফ্ল্যাট দখলে রেখেছেন।
বরাদ্দপ্রাপ্ত ফ্ল্যাটের পরিবর্তে অন্য ফ্ল্যাট দখল করে আছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে আছেন, ভোলার দৌলতখানের মো. শহীদুল্লাহ, জামালপুরের বকশীগঞ্জের লাল মিয়া, মৌলভীবাজারের বড়লেখার আনোয়ারা বেগম, যশোর সদরের মতিউর রহমান, যশোর সদরের মো. ফজলুল করিম, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের মৃত আব্দুল কাদেরের দুই ছেলে আমির মাহমুদ ও আশিক মাহমুদ, নড়াইলের কালিয়ার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. সেকান্দর আলী, মাগুড়া সদরের মৃত বেনোয়ারী বিশ্বাসের ছেলে চৈতন্য কুমার বিশ্বাস (যুদ্ধাহত কি না, তদন্ত চলছে), ঝিনাইদহের শৈলকূপার মৃত আবুল হোসেনের স্ত্রী সুরাইয়া পারভীন, যশোরের শার্শার মৃত সামসুর আলী মণ্ডলের স্ত্রী হামিদা মণ্ডল, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার মৃত আব্দুল মজিদের ছেলে হানিফ সরকার।
সিরাজগঞ্জের কাজীপাড়ার মৃত আব্দুল আজিজ ভূইয়ার ছেলে মো. চাঁদ মিয়া (যুদ্ধাহত কি না তদন্ত চলছে, তার নামে রূপনগরে জমি বরাদ্দ আছে), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের মৃত আসগর আলীর ছেলে মো.সামসুর রহমান।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের মৃত হাফিজ অসীমের ছেলে সিরাজুল ইসলাম যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেব প্রতীয়মান হয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দপ্রাপ্ত ফ্ল্যাটের বদলে দুটি ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছেন। তাছাড়া আজিমপুরে তার নামে বাড়ি বরাদ্দ আছে।
খুলনার দৌলতখানের মৃত কিরন চন্দ্র কীর্ত্তনিয়ার ছেলে লিবিও কীত্তনিয়া বরাদ্দপ্রাপ্ত ফ্ল্যাটের বদলে অন্য ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছেন। মিরপুরে তার প্লট রয়েছে।
ফ্ল্যাট দখলে রাখা চারজনের বিষয়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, সে বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা হলেন, যশোর সদরের মৃত নাজিম বিশ্বাসের ছেলে আব্দুল মাজেদ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মৃত নাজির মিয়ার ছেলে তরিক উল্যাহ, যশোরের অভয়নগরের মৃত শশধর দাসের ছেলে কালিপদ দাস, মাগুড়ার শালিখার মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে ফুল মিয়া।
এ ছাড়া পাবনা সদরের মৃত ইসরাত আলীর ছেলে কেয়াম উদ্দীন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কি না, তা সন্দেহজনক হওয়ায় তদন্ত চলছে।