সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার এখনও সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়নি। ভবন ধসে হতাহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা ও ভবন নির্মাণে ত্রুটি সংক্রান্ত ইমারত আইনে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ স্থগিত হয়ে আছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে।
দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় এখন পর্যন্ত অভিযোগ গঠনই হয়নি। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ৮ মে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে দিন ধার্য রয়েছে।
হত্যা মামলা
আদালত সূত্র জানায়, রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সাভার থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষ একজন সাক্ষীও উপস্থাপন করেছিলেন। কিন্তু ছিদ্দিকুর রহমান নামে এ মামলার এক আসামি গত বছরের শেষের দিকে মারা যান। ওই আসামির মৃত্যুর বিষয়ে কোনও প্রতিবেদন রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে উপস্থাপন না করায় সাক্ষ্যগ্রহণই শুরু হয়নি। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন করেন।
এ মামলায় ৪১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলেও প্রধান আসামি সোহেল রানা, ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম ও সাইট ইঞ্জিনিয়ার সরোয়ার কামাল বর্তমানে কারাগারে আছেন। বাকিদের মধ্যে আটজন রয়েছেন পলাতক। অন্যরা জামিনে।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) খন্দকার আব্দুল মান্নান বলেন, ‘ছিদ্দিকুর রহমান নামের যে আসামি মারা গেছেন, তার মৃত্যুর বিষয়ে সাভার থানা পুলিশের কোনও প্রতিবেদন এখনও তারা কিংবা আদালত পাননি।’
তিনি আরও জানান, ‘এ মামলার সাত আসামি হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। এরপর হাইকোর্ট ওই সাত আসামির বিরুদ্ধে পরিচালিত বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। তাই তাদের বিচার আলাদাভাবে হবে কিনা, সেই বিষয়ে মত চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তার অভিমত এখনও পাওয়া যায়নি। এ হত্যা মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৭ মে দিন ধার্য করেছেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ এস এম কুদ্দুস জামান।’
ইমরাত নির্মাণ আইনে মামলা
ইমারত নির্মাণ আইনের মামলায় ২০১৬ সালের ১৪ জুন রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। আদালতের বিচারক মোস্তাফিজুর রহমান আগামী ১৭ মে এ বিষয়ে রিভিশনের আদেশ আদালতে দাখিল করতে আসামিপক্ষকে নির্দেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (অ্যাডিশনাল পিপি) বলেন, ‘এ মামলায় ১৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর অভিযোগ গঠন আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পোশাক কারখানার মালিকসহ তিন আসামির পক্ষে পৃথক তিনটি রিভিশন দায়ের করা হয়। এই তিনটি রিভিশনের শুনানি শেষ না হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করতে পারছেন না। ’
এ আদালতের একটি সূত্র জানায়, শুনানি শেষে গত ১০ এপ্রিল ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রফিকুল ইসলাম পোশাক কারখানার মালিক বজলুস সামাদ আদনানের দায়ের করা রিভিশনটি খারিজ করে দেন। অন্য দুই পোশাক কারখানার মালিক আনিসুর রহমান ও আনিসুল ইসলামের রিভিশন দু’টি শুনানির অপেক্ষায় আছে।
হত্যা মামলার যে তিন আসামি কারাগারে রয়েছেন, তারা এ মামলারও আসামি। এ মামলায় পলাতক চারজন। তারা হলেন ফারজানা ইসলাম, নান্টু কন্ট্রাকটর, রেজাউল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমান। বাকিরা জামিনে রয়েছেন।
দুদকের মামলা
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মফিদুল ইসলাম বাদী হয়ে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় সোহেল রানা ও তার বাবা-মাসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৫ জুন একটি মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে এক মাসের মাথায় ১৬ জুলাই ওই ১৮ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগপত্র দেন। বর্তমানে এটি একই আদালতে অভিযোগ গঠনের আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
দুদকের মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, রানা প্লাজা নামের শপিং কমপ্লেক্সেটি ছিল ছয়তলা বিশিষ্ট। কিন্তু আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে সাভার পৌরসভা থেকে ডিজাইন বহির্ভূত অবৈধভাবে ১০ তলা পর্যন্ত নির্মাণের অনুমোদ নেওয়া হয়। এরপর ছয়তলা বিশিষ্ট শপিং কমপ্লেক্সটিকে নয়তলা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। একই ভবনে সাভার পৌরসভা থেকে অবৈধভাবে অনুমোদন নিয়ে গার্মেন্টস স্থাপন করে ব্যবসা পরিচালনা করেন।
তদন্তের প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি শেষ হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল। পরে এ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান এ মামলার অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য আগামী ৮ মে দিন ধার্য করেছেন।