ম্যাচটি লেন্ডল সিমন্সের দেখার কথা ছিল টিভি পর্দায়। কিন্তু ভাগ্য তাকে ক্যারিবিয়ান থেকে উড়িয়ে আনল ভারতে। প্রথমবার মাঠে নামলেন বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে। দুবার ক্যাচ দিয়েও টিকে রইলেন দুবারই নো-বল হওয়ায়। আরেকবার ক্যাচ দিয়ে ছক্কা পেলেন ফিল্ডারের পা সীমানা স্পর্শ করায়। এবং শেষ পর্যন্ত অসাধারণ এক ইনিংসে ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে তুললেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
ওপেনিংয়ে ক্রিস গেইল না পারলেও জ্বলে উঠলেন জনসন চার্লস। সময়ের দাবি মিটিয়ে ঝড় তুললেন আন্দ্রে রাসেল। ভারতের বিশাল স্কোর তাড়া করে ৭ উইকেটে জয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ২০ ওভারে ২ উইকেটে ১৯২ রান করেছিল ভারত। ২ বল বাকি রেখে জিতে যায় ক্যরিবিয়ানরা।
টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নেমে ৫১ বলে ৮৩ রানে অপরাজিত সিমন্স। প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নেমে ২০ বলে অপরাজিত ৪৩ রাসেল।
ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং তাণ্ডবে আড়ালে পড়ে গেলেন বিরাট কোহলি। ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসে আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো কোহলি এদিনও ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। অসাধারণ আরেকটি ইনিংসে ভারতকে এনে দিয়েছিলেন বড় পুঁজি।
শেষ নয় সেখানেই। প্রায় আড়াই বছর পর বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই নিলেন উইকেট। বড় জুটি ভেঙে ভারতকে ফেরালেন ম্যাচে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারলেন না তিনিও। শেষ ওভারে তার হাতে আবারও বল তুলে দিয়েছিলেন ধোনি। প্রয়োজন ছিল মাত্র ৮ রান। প্রথম ২ বলে ১ রান দিয়েছিলেন কোহলি। পরের দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জিতিয়ে দেন রাসেল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বকাপ দলে শুরুতে ছিলেন সিমন্স। কিন্তু পরে ছিটকে যান পিঠের চোটে। পরে তার সুযোগটি এলো আরেকজনের চোটে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে ইনজুরি নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ হলো আন্দ্রে ফ্লেচারের। তার বদলে উড়ে এলেন সেই সিমন্স। আসলে এলেন তিনি দলের ত্রাণকর্তা হয়ে!
এর আগে পাওয়ার প্লেতে এক ওভারের ঝড়েই ইনিংস গতিময় করলেন রোহিত শর্মা। চোখধাঁধানো সব শটে আবারও মুগ্ধতা জাগানিয়া ইনিংস বিরাট কোহলির ব্যাটে। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ভারত পেয়েছিল বড় পুঁজি। শেষ পর্যন্ত তা পার করে ফেলল ক্যারিবীয়রা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ ওভারে ১৯২ রান করেছে ভারত। ৪৭ বলে ৮৯ রান করে অপরাজিত থাকেন কোহলি।
অসাধারণ ৮২ রানের অপরাজিত ইনিংসে আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো কোহলি এদিনও ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। উইকেটের চারপাশে খেলেছেন দুর্দান্ত সব শট। যথারীতি ইনিংস জুড়ে ছিল নিখুঁত টাইমং আর প্লেসমেন্টের অপূর্ব নিদর্শন।
এই বিশ্বকাপেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দলকে বিপর্যয় থেকে টেনে তুলে জিতিয়েছেন কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান তাড়ায় দলকে জিতিয়েছেন দারুণ দক্ষতায়। এবার দেখালেন ওপেনারদের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিত্তি কিভাবে কাজে লাগাতে হয়।
শিখর ধাওয়ানকে বাদ দিয়ে ভারত একাদশে আনে অজিঙ্গা রাহানেকে। বদলে যাওয়া উদ্বোধনী জুটি ভারতকে এনে দেয় টুর্নামেন্টে তাদের সেরা শুরু।
রোহিত ও রাহানের শুরুটা ছিল সাবধানী। পরিকল্পনা মতোই প্রথম ৫ ওভারে উইকেট ধরে রাখে ভারত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে আন্দ্রে রাসেলকে তুলোধুনো করেন রোহিত। দুই ছক্কা, এক চারে নেন ওভারে ২০ রান।
থিতু হওয়া রোহিতকে দারুণ এক স্লাইডারে এলবিডব্লিউ করেন বদ্রি (৩১ বলে ৪৩)। তবে স্বস্তি খুব একটা পায়নি ক্যারিবিয়ানরা। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো ইনিংসটায় যেখানে শেষ করেছিলেন কোহলি, সেখান থেকেই যেন শুরু করলেন এই ম্যাচে।
শুরুতেই অবশ্য রান আউটে কোহলিতে ফেরানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু দুই দফায় খুব কাছ থেকে আন্ডার আর্ম থ্রো স্টাম্পে লাগাতে পারেননি দিনেশ রামদিন ও ডোয়াইন ব্রাভো। সুযোগ হাতছাড়ার মাশুল ভীষণভাবেই দিতে হয়েছে ক্যারিবিয়ানদের।
দ্বিতীয় উইকেটে কোহলি ও রাহানে যোগ করেন ৬৬ রান। রাহানের বিদায়ের পর বাকি সময়টুকু ছিল ‘কোহলি-শো’। একপ্রান্ত থেকে মহেন্দ্র সিং ধোনি সঙ্গ দিয়েছেন, আরেক প্রান্তে কোহলি খেলেছেন জাদুকরি সব শট। মাত্র ২৭ বলে ৬৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন দুজন, যাতে ধোনির অবদান মাত্র ১৫!
৩৩ বলে টুর্নামেন্টে তৃতীয় অর্ধশতক স্পর্শ করেন কোহলি। পরের ১৪ বলে করেছেন ৩৯ রান! শেষ পর্যন্ত ১১ চার ও ১ ছক্কায় অপরাজিত ৮৯। ভারতের রান ছাড়িয়ে যায় ১৯০।
ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে এই রান তাড়া অসম্ভব নয় দেখিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।