বাংলাদেশের করোনা পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও, পরীক্ষার সংখ্যা সেই অনুপাতে বৃদ্ধি পায়নি। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে দৈনিক কমপক্ষে ২০ হাজার পরীক্ষা করা উচিত, সমন্বয়হীনতা ও তথ্য-উপাত্তের অভাবের ফলে তেমনটি হচ্ছে না।
অন্যদিকে, ঠিকমত লকডাউন বাস্তবায়ন না করায় মহামারি পরিস্থিতির ক্রমবনতি ঘটছে। একইসঙ্গে রোগ পরীক্ষায় দুর্নীতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এ ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে যদিও, অতীত ইতিহাস বলে যে এ ধরনের দুর্নীতি বিরোধী ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয় না।
শনিবার (১১ জুলাই) সানেম নেটিজেন ফোরাম আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় বাংলাদেশে চলমান মহামারি পরিস্থিতির সার্বিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জগুলোর ওপরে একটি প্রেজেন্টেশনে সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান এসব তথ্য তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের অর্থনীতির সংকটগুলো ড. রায়হানের প্রেজেন্টেশনে উঠে আসে। তিনি বলেন, নিম্নমুখী আমদানি বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রেমিট্যান্সের রেকর্ড প্রবাহ নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরে তিনি বলেন যে, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বর্তমানে যে রেমিট্যান্স আসছে সেটি প্রবাসী শ্রমিকদের শেষ সঞ্চয়। প্রবাসী শ্রমিকদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের দেশে ফেরত আসার আশঙ্কা আরও বাড়ছে।
সানেমেরে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থারও উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে না। বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে, বছর কয়েক আগে প্রস্তাবিত সার্বভৌম বন্ডের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি একটি সম্ভাবনা হলেও এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়েও আলোচনা করেন এবং বলেন যে মূল্যস্ফীতির ফলে প্রকৃত আয় কমে গেছে। আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের বাজারে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রমাগত সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে। উৎপাদনে ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের দিকে নির্দেশ করে তিনি বলেন শহর থেকে গ্রামে এক ধরনের উল্টো অভিবাসন বা রিভার্স মাইগ্রেশন হচ্ছে। যে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো গ্রামে ফিরে যাচ্ছে, সেখানে গিয়ে তারা কোনো কাজ নাও পেতে পারে এবং এতে করে নতুন সামাজিক চ্যালেঞ্জও তৈরি হতে পারে।
ব্যাংকিং খাতের নানা প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন যে, ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতার জন্য প্রণোদনা প্যাকেজের বিতরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রণোদনা প্যাকেজ বিতরণ ও বাস্তবায়নে একটি মনিটরিং ব্যবস্থা দাঁড় করানোর ওপরেও জোর দেন তিনি।
স্বাস্থ্যখাত, ব্যাংকখাত ও কর আদায়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই বলে মত দেন ড. রায়হান। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে সেটি অবাস্তব। অন্যদিকে, কর আদায়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের উদ্যোগ নেই। রাতারাতি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে ওঠা হয়তো সম্ভব নয়, কিন্তু অন্তত সঠিক দিকে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।