চলমান লকডাউনের মধ্যে এবার রমজানে অধিকাংশ পণ্যের দাম স্বাভাবিকের কাছাকাছি থাকলেও কয়েক গুণ বেড়েছে আদার দাম; অস্বাভাবিক এই মূল্য বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের দুষলেও তারা বলছেন আমদানি ঘাটতির কথা। গেল মাসের তৃতীয় সপ্তাহেও খুচরায় যে চীনা আদার কেজি ছিল ১০০ টাকা, তা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা।
বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, আদার আমদানি মূল্য গড়ে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। ‘কারসাজির কারণে’ পাইকারিতে কেজি প্রতি আদার দাম হয়েছে ২৫০ টাকা। আর খুচরায় তা বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের কিছু আমদানিকারক, ব্রোকার ও কমিশন এজেন্টরাই কৌশলে দাম বাড়িয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের ভাষ্য।
তবে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় আদার দাম বেড়েছে। আদা আমদানি স্বাভাবিক হলে দাম কমবে। বন্দরের হিসেবেও চলতি বছরের প্রথম চার মাসে আদার আমদানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কম। গত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আদা এসেছে প্রায় ১২ হাজার টন। গত বছরের প্রথম চার মাসে আদার আমদানি ছিল ৩০ হাজার টন।
এরপর করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন বাস্তবায়নের পর ভারত থেকে আদা আমদানি বন্ধ হয়ে যায় বলে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান। মিয়ানমার থেকেও আদা আমদানি কমে শূন্যের কোঠায় নামে। দেশীয় আদার সরবরাহও বাজারে কম। তাই পুরো বাজারেই এখন আমদানি করা চীনা আদার আধিপত্য। বাজার তদারকিতে থাকা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে চীনা আদার দাম পাইকারিতে ছিল কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকা।
“করোনাভাইরাস রোধে আদা চায়ের উপকারিতা নিয়ে প্রচার থাকায় আদার চাহিদা বেড়ে যায়। এরপর প্রতিদিন আদার দাম বাড়িয়ে এখন পাইকারিতে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।” খুচরায় আদার দাম কেজিতে ৩০০ টাকা হওয়ার পর শুক্রবার অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসনের অভিযান দল। খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, পাহাড়তলির বিভিন্ন আড়ত ও মোকামের হিসাবের খাতা পর্যালোচনা তারা দেখতে পান, ১৫ এপ্রিলের পর থেকে আদার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ১২৫ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় উঠেছে।
আমদানি মূল্যের তিন গুণ দামে বিক্রি
সরকারি হিসেবে ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৩২ আমদানিকারকের আমদানি করা ৩ হাজার ১৪৩ টন আদার শুল্কসহ আমদানি খরচ ২৫ কোটি ২৬ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
তৌহিদুল ইসলাম বলেন, এ হিসেবে আদার গড় আমদানি মূল্য কেজি প্রতি ৮০ টাকার মতো। পঁচনশীল হওয়ায় ১৫ শতাংশ লাভে এই আদা ১২০-১২৫ টাকায় তারা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু পাইকারিতে বিক্রি করছেন ২৫০ টাকায়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন আমদানিকারক, দালাল ও কমিশন এজেন্টরা ‘কারসাজি করে’ আদার দাম বাড়িয়েছেন।
“চাহিদা থাকায় আমদানিকারকরা কমিশন এজেন্ট আর দালালদের মাধ্যমে সরাসরি বন্দর থেকে আড়তদারদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে। আজ (রোববার) অভিযানে গিয়ে দেখলাম, পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে কেনার রশিদ নেই। আমদানিকারকরা আড়তদারদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করেই দাম বাড়িয়েছে। তাই রশিদ দেখাতে পারছে না।”
রোববার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম ও আলী হাসানের নেতৃত্বাধীন অভিযান দল বেশি দামে আদা বিক্রি করায় খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের কামাল উদ্দিন ব্রাদার্সকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
পাহাড়তলি বাজারে আদা কেনার রশিদ না থাকায় এক ব্যবসায়ীকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আরেক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদার।
অভিযান দল আমদানিকারকদের খোঁজে খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ বাজার, নবী সুপার মার্কেট, আমির মার্কেট, ইয়াকুব বিল্ডিং, চাক্তাই এলাকায় গিয়ে দেখে তারা বেশিরভাগই তালা দিয়ে চলে গেছেন।
দুয়েকজন আমদানিকারক আমদানি মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আদা বিক্রির প্রমাণ দিতে পেরেছেন।
আদার দাম কিছু দিনের মধ্যে কমে যাবে বলে মনে করছেন হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিচ।
তিনি বলেন, “বন্দরে চীন থেকে আদা আসলে আর ভারত যদি লকডাউন তুলে দেয় তাহলে বাজারে আদা ঢুকবে। যেহেতু রমজানের জন্য সাধারণ ক্রেতারা আদা কিনে ফেলেছে তাই আমদানি বাড়লেই দাম পড়ে যাবে।”
সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর