মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

দাম বাড়তে বাড়তে তিতো হয়ে উঠছে চিনি

যা যা মিস করেছেন

বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সবরকমের চিনির দাম বেড়ে চলেছে। খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বাজার থেকে অনেকটাই উধাও হয়ে গেছে প্যাকেটজাত চিনি।

সরকার নির্ধারিত দামে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হয়। ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানির পর এই দামে চিনি বিক্রি করে তারা পোষাতে পারছেন না।

এই কারণে প্রতি কেজি চিনিতে ২০ থেকে ২৫ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। বাংলাদেশের ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে একটি চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে সংগঠনটি।

বর্তমানে বাজারে প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি ১২৫ টাকা আর খোলা চিনি ১২০ টাকা বিক্রি করার জন্য দাম বেঁধে দেয়া আছে।

কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবি, এর ফলে তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করতে গিয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে কোম্পানিগুলোকে। তাই তারা চিনির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এর আগে ৬ জুন চিনির দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ট্যারিফ কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার আগেই চিনির দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিলেন ব্যবসায়ীরা। ২২ জুন থেকে তারা চিনির নতুন দাম কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন।

চিনি কেন তিতো হয়ে উঠছে?
বাংলাদেশের বাজারগুলোয় গত প্রায় একমাস ধরেই প্যাকেট চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। খোলা চিনিতেও ১০-১৫ টাকা করে বেশি রাখছেন বিক্রেতারা।

ঢাকার কলাবাগান এলাকার বাসিন্দা ইব্রাহিম মুন্সী বলছেন, ‘’তিন সপ্তাহ আগেও চিনি কিনেছি ১২০ টাকা দরে। প্যাকেটের চিনি পাইনি, খোলা চিনি নিতে হয়েছে। গত কাল সেই চিনি কিনলাম ১৩৫ টাকা দরে। চিনির দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে চিনিতে আর মিষ্টি থাকছে না, তিতো হয়ে যাচ্ছে।‘’

কাঠালবাগান এলাকার মুদি দোকানদার মনোয়ার হোসেন বলছেন, ‘’একমাসের বেশি সময় ধরে প্যাকেটের চিনি আসে না। খোলা চিনি কিনতে গিয়ে আমাদের কেজি প্রতি খরচ পড়ে ১২৫ টাকা। তার সাথে পরিবহন খরচ আছে, আমাদের মুনাফা করতে হয়। এজন্য বেশি দামে চিনি বিক্রি করতে হয়।‘’

বাংলাদেশে বছরে ১৮ থেকে ২০ লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ টনের মতো চিনি দেশে উৎপাদিত হয়। বাকি চিনি ভারত, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা থেকে আমদানি করা হয়।

গত এক বছরে বাংলাদেশে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ২০২২ সালের জুন মাসে চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৮৪ টাকা।

চিনির এই দাম বাড়ার পেছনে ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারা, ডলারের বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি এবং আমদানিতে শুল্ক এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়াকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

একাধিক ব্যবসায়ী বলেছেন, ভারত থেকে চিনি রফতানি বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্রাজিলের বাজারে অনেক দেশ ভিড় করছে। ফলে, এখন সেখান থেকে নতুন করে কোন চিনি আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের কথা- এসব কারণে চিনির দাম বেড়ে যাচ্ছে।

সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিতে বলা হয়েছে, অতীতে ডলার প্রতি ৯৬-৯৮ টাকা রেটে ঋণপত্র খোলা হলেও সেটা এখন ১০৫ টাকায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানি শুল্ক আগের প্রতি টনে ২২ হাজার থেকে বেড়ে ৩২ হাজার হয়েছে। ফলে, ওই সমিতি বলছে, মিল গেটে সরকার নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি এখন সম্ভব হচ্ছে না।

ব্যবসায়ীদের দাবি, আমদানি করা থেকে খুচরা বাজারে নেয়া পর্যন্ত প্রতি চিনিতে ৪২ টাকা শুল্ক-কর দিতে হয়। তাদের কথা- শুল্ক কমালে ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমবে।

বাংলাদেশ সুগার রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গোলাম রহমান বলেছেন, ‘’আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বেশি। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানির খরচও বেশি হচ্ছে। আবার ডলার সংকটের ব্যাংকগুলোও এলসি খুলছে না। ফলে চিনির সরবরাহ কমে গেছে। এসব কারণে চিনির দাম বাড়ছে।‘’

এর আগে গত মে মাসে এই অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়ে জানায় বিশ্ব বাজারে চিনির দামের পরিস্থিতি জানায়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারের দামে চিনি আমদানি করলে চিনির আমদানি মূল্যই সরকার নির্ধারিত বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি হয়। এরকম বাস্তবতায় এই দামে তারা চিনি আমদানি করবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত জানতে চেয়ে চিঠি দেয়া হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

ভোজ্য তেল, চিনিসহ আরো কয়েকটি আমদানি পণ্যের দাম বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে নির্ধারণ করে সরকার। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত আসতে দেরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নিজেরাই চিনির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

তবে ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, একদিকে যেমন বাজারে চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে চিনি থাকলেও তারা আস্তে আস্তে সেগুলো বাজারে ছাড়ছেন। ফলে চিনির সংকট পুরোপুরি কাটছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী বিবিসিকে বলেন, সরকার যখন চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, তখন টন প্রতি বিশ্ববাজারে দাম ছিল ৫৮০ ডলার। এখন সেটা ৬৭০ ডলারে উঠেছে। ফলে চিনির দাম না বাড়িয়ে তারা কোন উপায় দেখছেন না।

ইন্টারন্যাশনাল সুগার অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে চিনির দাম বিশ্ববাজারে ২০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে।

কর্তৃপক্ষ কী করছে?
ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, চিনির ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের দর, আমদানি খরচ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে চিনির দাম কত হওয়া উচিত, এ নিয়ে ট্যারিফ কমিশন আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। মঙ্গলবারও এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে।

‘’সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে। তারই প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের বাজারে। রিফাইনারিগুলো নানা সমস্যার কথা বলছে। সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে যে, আসলে চিনির দাম কত হওয়া উচিত। আশা করা যায়, একটা ন্যায্য দামই নির্ধারণ করে দেয়া হবে,’’ তিনি বলেন।

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছিলেন, ‘’চিনির প্রধান উৎস ভারত ও ব্রাজিল। ভারত থেকে এই মুহূর্তে আমদানি বন্ধ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির একটা সংকট আছে। ৪৫০ ডলার টনের চিনির দাম বেড়ে ৭০০ ডলারে ঠেকেছে। আন্তর্জাতিক বাজার অস্থিতিশীল হলে দেশের বাজার স্থিতিশীল রাখা খুবই টাফ। সূত্রঃবিবিসি

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security