...
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

খরতাপের পারদ চা-বাগানে ছুঁয়েছে

যা যা মিস করেছেন

চৈত্রের শেষ থেকে বৈশাখেও চলমান তাপপ্রবাহের পারদ জনজীবনে যে ভোগান্তি নিয়ে এসেছে, তার তাপের পারদ ছুঁয়েছে ফল-ফসলি জমি থেকে শুরু করে চা বাগান গুলোতে ও।
কয়েক দিন ধরে চলমান তাপের থার্মোমিটারে পারদ উঠতে থাকায় চা গাছের ‘কুঁড়ি বাড়ছে না’, কোথাও আবার পুরো গাছটিই পুড়ে গেছে। তাতে অন্য সময়ের তুলনায় চা পাতা উত্তোলনেও ‘অর্ধেকে’ নেমে আসার কথা বলছেন চা শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুরভুরিয়া, ভাড়াউড়া চা বাগানসহ কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের বিভিন্ন সেকশনে মাঝে মাঝে একটি-দুটি করে গাছ পুড়ে মরে গেছে। চা গাছে নতুন আসা কুঁড়িগুলো গত এক সপ্তাহ ধরে থমকে আছে, কোথাও ঈষৎ হলুদ বর্ণ ধারন, আবার পাতা ঝিমিয়ে পড়েছে।
ভুরভুরিয়া, ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিকরা বলেন, এই সময়ে সারাদিনে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পাতা তুলার কথা, সেখানে পাতা উঠছে ১০ থেকে ১২ কেজি। ফলে দৈনিক ১৭০ টাকা হাজরির (মজুরি) জন্য যে ২৪ কেজি পাতা বাধ্যতামুলকভাবে তুলতে হয়, সেটিও পূরণ হচ্ছে না।
চা শ্রমিক বাসন্তী জানান, প্রচণ্ড রোদ্দুর সারাদিন কাজ করেও মেলাতে পারছেন না তাদের হাজরি।
বালাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট কেন্দ্রর পরিচালক ইসমাইল হোসেন জানান, চায়ের জন্য ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উত্তম। তবে সর্বোচ্চ ২৯ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপসহ্য করার ধারন ক্ষমতা থাকে। এর উপরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে খরায় পড়বে চা। দেখা দেবে বাঞ্জি দশা।
তিনি বলেন, চা বাগানে প্রতি ২০ ফুট অন্তর শেড ট্রি থাকলে তাপমাত্রা ৩৫/৩৬ ডিগ্রি পর্যন্ত সহনীয় পর্যায়ে হয়। সূর্যালোকের উপস্থিতিতে গাছের পাতায় অবস্থিত ক্লোরফিলের মাধ্যমে গাছ যেভাবে খাদ্য আহরণ করে, তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি পার হলেই চা গাছ এই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
চা গাছের বাঞ্জি দশাকে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মনে করেন বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক রফিকুল হক। তিনি বলেন, আমাদের এখন এরকম অবস্থার মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করা বাঞ্ছনীয় হয়ে উঠেছে। এর জন্য চা বাগানে সমন্বিত পদ্ধতি মেনে চলতে হবে। চলমান অবস্থায় তরুণ চা গাছের গোড়ায় কচুরিপানা ও লতাপাতা দিতে হবে। প্রত্যেক বাগানেই জলাধার তৈরি করতে হবে এবং সেচ পদ্ধতি চালু রাখতে হবে।
এদিকে, মাত্রাতিরিক্ত গরমের পারদ মানুষ যেমন হিটস্ট্রোক করে, তীব্র তাপদাহে ধানগাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেটাকে বলা হয় হিটশক বা হিট ইনজুরি। হিটশক হলে ধানের ফুল পুড়ে দানা চিটা হয়ে যায়। মূলত ধানের ফুল ফোটার সময়ই এ ধরনের ক্ষতি হয়। বর্তমানে এ ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের প্রধান ফসল বোরো ধান।
ধান গবেষকরা বলছেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বাড়া অথবা কমা— দুই কারণেই হিটশক বা হিট ইনজুরি হয়। ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে হিটশকের মাত্রা ধরা হয়।
বোরো মৌসুম শুরু হয় শীতে নভেম্বর (কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাসে। আর শেষটা হয় চরম গরমের এপ্রিল-মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাসে। ধানের জন্য ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি তাপমাত্রা অসহনীয়। ফুল ফোটার সময় এক-দুই ঘণ্টা এ তাপমাত্রা বিরাজ করলে মাত্রাতিরিক্ত চিটা হয়ে যায়। দেশে ২০২১ সালে এ ধরনের হিটশকের ঘটনা ঘটে। ওই বছর প্রায় অর্ধলাখ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতির কবলে যেমন কৃষকেরা তেমনি চা বাগানের সংশ্লিষ্টরা তেমনি পরিবেশের সাথে মোকাবেলা করে তৈরি হয়ে নেয়া।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.