মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪

৫০০ বছরের ইতিহাসের সাক্ষী তেঁতুলগাছটি

যা যা মিস করেছেন

ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলন ও সাঁওতাল বিদ্রোহখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাচীন তেঁতুলগাছ। কেউ বলেন ৭০০ বছর, আবার কেউ বলেন ৮০০ বছর বয়স এ তেঁতুলগাছটির। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ৫০০ বছর।

আর তেঁতুল জাতের বিবেচনায় দাবি করা যেতে পারে এটিই দেশের প্রাচীন তেঁতুলগাছ। তবে ২০০৩ সালের আগেও কেউ জানত না তেঁতুলগাছটির বয়স কত। ওই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করান এবং বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে নিশ্চিতপ হন, গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। তার পর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে এর দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রশাসন এবং গাছটির যাতে কোনো ক্ষতি করা না হয়, সে জন্য জনসচেতনতামূলক একটি বোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের বরেন্দ্র ভূমির মাঝে একসময়ের জমিদার এলাকা সুরলা গ্রামে মাথা সোজা করে দাঁড়িয়ে আছে তেঁতুলগাছটি। প্রায় ৩০ বছর আগে ঝড়ে বড় ডালটি ভেঙে পড়লেও মাথা নোয়ায়নি গাছটি। আগের জমিদার এলাকা সুরলার আদিবাসীদের নির্যাতন, অত্যাচার আর দারিদ্র্যতার আঘাতে মাথা নুইয়ে গেলেও আজও তারা তেঁতুলগাছটি নিয়ে গর্ব করে। শত শত মানুষের গর্ব এই তেঁতুলগাছটি এলাকার দেবস্থান হিসেবেও পরিচিত।
গ্রামের শতায়ু খীর বালা জানান, ‘আমরা ছোটবেলায় শুনেছি এই গাছের বয়স প্রায় ৫০০ বছর। ’

গাছের পাশেই বাস করেন কল্পনা প্রামাণিক। দুই ছেলে ও স্বামী নিয়ে তার সংসার। নিজের ঘরবাড়ির মতোই তিনি গাছের নিচ পরম মমতায় প্রতিদিন পরিষ্কার করেন।

আগে ওই গাছের গোঁড়ায় ছিল কালীপূজার স্থান। এখন গাছের পাশেই একটি ছোট মন্দির করে সেখানেই কালীপূজা করেন স্থানীয় আদিবাসীরা। বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ওই গাছে প্রচুর বক আসে দূরদূরান্ত থেকে। এ ছাড়াও বছরের অন্য সময় টিয়া, ঘুঘু, বক, পেঁচাসহ বিভিন্ন পাখি বাস করে।

৩০ বছর আগে ১১৫ বছর বয়সে মারা গেছেন ওই গ্রামের শশী মোড়লের মা বিরো দাসী। তিনি বলতেন, ‘আমার ঠাকুর দাও দেখেছেন গাছটির এমন বিরাট আকার।’

এলাকার প্রবীণ আদিবাসীরা জানান, জমিদার কুঞ্জু মোহন মৈত্রের কাছারি ও খামারবাড়ি ছিল এখানে। আর তেঁতুলগাছের নিচে ছিল বিরাট কালীমন্দির। কালীমন্দিরে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ দেশের দূরদূরান্ত থেকে আদিবাসীরা আসতেন পূজা-অর্চনা করতেন। তেঁতুল গাছটি এখনও গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

নেজামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল হক জানান, ২০০৩ সালের দিকে উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের দিয়ে তেঁতুলগাছটি পরীক্ষা করান চাঁপাইনবাবগঞ্জের তৎকালীন জেলা প্রশাসক নূরুল হক। সেই সময় বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে গাছটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি বলে নিশ্চিত করেন। তার পর থেকেই গাছটিকে প্রাচীনবৃক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

তিনি বলেন, প্রাচীন এ গাছ শুধু আমাদের এলাকার গর্বই নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যও।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security