সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

মা হলেন ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী, বাবা হতে চাননি আবু

যা যা মিস করেছেন

জন্ম থেকেই দৃষ্টি ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। জন্মের পর হারিয়েছেন মাকে। ১০ বছর আগে দরিদ্র বাবাকে অনুরোধ করে একই গ্রাম ভেলকুজোতের অবসরপ্রাপ্ত সার্ভেয়ার জয়নাল তার বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে রাখতে শুরু করেন ওই প্রতিবন্ধীকে। এক দশক কেটে যায় এই বাড়িতে। এরই মধ্যে ওই প্রতিবন্ধীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন সার্ভেয়ার জয়নালের ছেলে মাহবুবুর রহমান আবু।

একসময় অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু অস্বীকার করেন আবু ও তার পরিবার। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সময় এগিয়ে আসলে ওই নারীর পরিবার পিতার স্বীকৃতি দানের দাবি জানান। স্থানীয়রাও চেষ্টা করেন। কিন্তু আবুর পরিবার স্বীকৃতি না দিয়ে উল্টো তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার উদ্যোগ নেন।

গত বছরের ১৯ নভেম্বর হঠাৎ ওই প্রতিবন্ধী তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়ির লোকজন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর থেকে ওই তরুণীকে গ্রহণ না করতে বিভিন্ন রকমের টালবাহানা শুরু করে আবুসহ তার পরিবার। মেয়েটিকে আটকে রেখে গর্ভপাতের পরিকল্পনাও করা হয় বলে জানা যায়। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানার পর থেকেই বাচ্চা নষ্ট করার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে মেয়েকে ঘরবন্দি করে রাখা হয়। পরে উপায় না পেয়ে ওই দিন রাতে ৯৯৯ নম্বরে পুলিশের সহযোগিতা চাইলে তেতুলিয়া থানা পুলিশের সহায়তায় মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন রাতে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ওই তরুণী। নবজাতক এই কন্যার নাম দেয়া হয় মাহমুদা আক্তার। বর্তমানে মাসহ শিশুটি রয়েছে নানার বাড়িতে।
এদিকে ২২ ডিসেম্বর মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন পিতা। মামলার কয়েকদিন পরেই আসামিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। কিন্তু আদালতে একটি সাজানো এফিডেফিট বিয়ে রেজিষ্ট্রির কাগজ দাখিল করে আবু। ওই রেজিষ্ট্রি দলিলে উল্লেখ করা হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ওই প্রতিবন্ধী তরুণীকে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন আবু। রেজিষ্ট্রি দলিলে আবুর ছবি ও স্বাক্ষর থাকলেও ওই তরুণীর কোনো ছবি নেই, তবে টিপসই আছে। তরুণীর বাবা অভিযোগ করেন, আমার মেয়েকে আবু বিয়ে করেনি। কাজীর মাধ্যমে বিয়েও হয়নি। তারা আমার মেয়ের টিপসই কখন নিলো, কিভাবে নিলো জানিনা। ছেলের পরিবার এখন আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে ও শিশুটিকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু আমরা নিরাপত্তাহীনতায় আছি। আমার মেয়ে ও শিশুটিকে তারা হত্যাও করতে পারে। তারা নানাভাবে আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। আমি আইনীভাবে এর সমাধান চাই।

এ ব্যাপারে আবুর বাবা জয়নাল আবেদিন বলেন, মেয়ের বাবা মামলা করেছে। আদালত যা নির্দেশ দেবে তাই মেনে নেবো।

এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা ও উপজেলা চেয়ারম্যান গত ৩১ ডিসেম্বর ভুক্তভোগীর বাড়িতে নবাগত শিশু ও তার প্রতিবন্ধী মাকে দেখতে যান। তারা শিশুটিকে কাপড় প্রদান করেন। শিশুটির খাবারের জন্য নগদ অর্থ দেন। এছাড়াও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে তাকে একটি বাড়ি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, প্রতিবন্ধী ওই নারী নবজাতক শিশু সন্তানসহ দরিদ্র পিতার বাড়িতে খুব কষ্টে আছে। আমরা তাকে নগদ অর্থ দিয়েছি। সামাজিক সুরক্ষায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। প্রতিবন্ধী ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security