লোকমান হাফিজ:
সিলেটে পাথর কোয়ারি বন্ধ ছিল দীর্ঘ দিন। মানুষের সময় কেটেছে বেহাল দশায়। যারা শ্রমিক তারা বেকার হয়ে পড়ে। কোয়ারি গুলো খুলবে খুলবে এইভাবে হঠাৎ করে কোনো কাজেও জড়াতে পারে না। তারিখের পর তারিখ সবাই চেয়ে থাকতো আদালত পাড়ার দিকে। পত্রিকার পৃষ্ঠায় চোখ বুলাতো দিনের পর দিন। কোয়ারি সম্পর্কে কোন খবর আছে কিনা জানতে।
অনেক পাথর ব্যবসায়ী আছেন যাদের মূলধন করেছেন ব্যাংক থেকে লোন এনে তারা পড়ে যান সাময়িক বিপাকে। খবর নিয়ে জানা যায়, কেউ কেউ আবার শহরে কেনা বাসাবাড়ি এবং গ্রামের কিছু জায়গা বিক্রি করেও ব্যাংকের লোন পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ আবার আর অপেক্ষায় আছেন কখন খুলবে পাথর কোয়ারী। লোন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জাফলং-বিছনাকান্দি-ভোলাগঞ্জের এলাকার খেটে খাওয়া মানুষজনের অবস্থা খুবই নাজুক। এলাকাতে বেড়ে ওঠে চুরি-ছিনতাই এবং রাহাজানি একদিকে করোনা মহামারী অন্যদিকে আর্থিক অসচ্ছলতা।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (পবা) একটি রিটের পর সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে সিলেটের জাফলং, ভোলাগঞ্জ, শাহ আরেফিন টিলা, বিছানাকান্দি ও লোভাছড়া থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
অন্যান্য কোন ব্যবসা এবং কাজেও হঠাৎ করে যাওয়া যাচ্ছে না এবং করোনা মহামারী থাকার কারণে পরিস্থিতি সকলেরই খারাপ। দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ক্ষিপ্ত হয়ে যাযন শ্রমিক এবং ব্যবসায়ীরা। জমে উঠে সিলেটে ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন। মানববন্ধন এবং সড়ক অবরোধ। পেটের দায়ে মাঠে নেমে যায় একসাথে সবাই। সর্বশেষ সনাতন পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলনের অনুমতি চেয়ে আন্দোলন করছিলেন পাথর ব্যবসায়ীরা।
বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় মাসের জন্য সনাতন পদ্ধতিতে গত ১৭ জানুয়ারি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলনের রায় দেন।
এতে করে স্বস্তি ফিরে পায় কুয়ারি অঞ্চলের মানুষেরা। তাদের মনে হালকা আশার আলো জাগে। যদিও ভোলাগঞ্জের পাথর কোয়ারী খুলে দেয়, তবুও আশায় থাকে অন্যান্য কোয়ারী ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি জানা যায়, পাথর উত্তোলন স্থগিতাদেশের বিপক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বিছনাকান্দি এবং জাফলং
ছয় মাসের জন্য খুলে দেয়ার আদেশ দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন,
আদালতে রিটকারিদের পক্ষে শুনানি করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাবিব-উন-নবী।