নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় অপহরণের ছয় বছর ও মামলার চার বছর পর ‘নিহত’ সেই যুবক নিজেই আদালতে হাজির হয়েছেন। এ ঘটনায় কথিত মামলার সেই ছয় বিবাদীকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
এছাড়া সিআইডি ও পুলিশের তিনজনের মধ্যে দুইজনকে পরের শুনানিতে নথিপত্রসহ উপস্থিত হতে বলেছেন নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌসের আদালত। বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন তিনি।
এদিকে মামলার বাদী ও মিথ্যা সাক্ষীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে, সে বিষয়ে কারণ দর্শানোর আবেদন করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।
অব্যাহতিপ্রাপ্তরা হলেন- মামুনের কথিত প্রেমিকা তসলিমা, তার বাবা রকমত আলী, ভাই রফিক, খালাতো ভাই সোহেল, সাগর ও মামা সাত্তার মোল্লা।
কথিত ওই অপহরণ ও খুনের ঘটনার ছয় বছর পর গত ২ সেপ্টেম্বর মামুন বাড়িতে ফিরে আসে এবং সব ঘটনা জানার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ আদালতে সশরীরে হাজির হলে এ নিয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এমদাদ হোসেন সোহেল বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিম মামুনের জীবিত ফেরার কারণে মামলাটি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। গত রোববার মামলাটি থেকে নিরপরাধ মক্কেলদের অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করলে সিআইডি ও পুলিশের তিনজনকে সশরীরে তলব করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ও এসআই জিয়াউদ্দিন উজ্জ্বল আদালতে হাজির হন। পরে বিচারক সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে বাদ দিয়ে অপর দুইজনকে পরের শুনানিতে নথিসহ হাজির হতে বলেছেন। পাশাপাশি আদালত মামলা থেকে ছয়জনকে অব্যাহতি প্রদান করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ১০ মে চাঁদপুরের মতলবের নিজ বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন ওই যুবক। তখন কোনো ডায়েরি কিংবা অভিযোগ করা হয়নি। এরপর ছেলেকে না পেয়ে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৬ সালের ৯ মে মামুনকে ‘অপহরণ করে খুন করার উদ্দেশ্যে গুম’র অভিযোগ এনে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন বাবা আবুল কালাম।
মামলায় আসামি করা হয় মামুনের কথিত প্রেমিকা তসলিমা, তার বাবা রকমত আলী, ভাই রফিক, সোহেল, খালাতো ভাই সাগর ও সাত্তার মোল্লাকে। মামলার পর সবাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে পুলিশের আবেদনে মাকসুদা বেগম নামের এক নারী- চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে দেয়া ‘অপহরণ করে খুন করার উদ্দেশ্যে গুম’র বর্ণনা ১৬১ ও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। ভিকটিমের কথিত প্রেমিকা তসলিমা ও তার ভাই রফিক দেড় বছর কারাবাস করেছেন। আর রকমত আলী, সাগর ও সাত্তার ছিলেন দেড় থেকে তিন মাস।
এর আগে ওই মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ফতুল্লা মডেল থানার এসআই মিজানুর রহমান। তিনি আদালতে আসামিদের রিমান্ড চাওয়ার সময়ে আর্জিতে উল্লেখ করেন- ভিকটিম মামুনের খালাতো বোন তাসলিমা ২০১৪ সালের ১০ মে মামুনকে ডেকে নিয়ে কৌশলে অপহরণ করে বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করেছে।
পরবর্তীতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ বিভাগ সিআইডিকে ন্যস্ত করা হয়। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। এতে মামলার এজাহারভুক্ত ছয়জনকেই অভিযুক্ত করেন। সাক্ষী করা হয়েছিল ২১ জনকে।