সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগে সাতজনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এ গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন এমসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, এম সাইফুর রহমান, অর্জুন, রাজন আহমদ, রবিউল এবং তারেক আহমদ।
সাইফুর রহমানের গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়, মাহফুজুর রহমান মাছুমের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে, রনির বাড়ি হবিগঞ্জে এবং তারেক সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা। এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। অভিযুক্তদের ধরতে পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু রাত ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ধর্ষিতা তরুণীকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়েছে। জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি প্রাইভেট কারযোগে স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে এমসি কলেজে বেড়াতে আসেন দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির এক তরুণী। ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের ওই ৪ কর্মী মিলে স্বামীসহ ওই তরুণীকে তুলে নেন পার্শ্ববর্তী কলেজ ছাত্রাবাসে। পরে তারা স্বামীকে বেঁধে মারধর করে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে স্বামীসহ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। পরে ধর্ষিতাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ধর্ষণের ঘটনার পর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন সরকার দলীয় স্থানীয় কয়েকজন নেতা। এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ায় ধর্ষকরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রী নিবাসে স্বামীকে বেঁধে ছাত্রলীগের কর্মীরা স্ত্রীকে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে পুলিশ গিয়ে গুরুতর অবস্থায় স্ত্রীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করেছে। এ ঘটনায় সিলেটে তোলপাড় চলছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় তাদের ধরতে অভিযান চলছিল। তবে অভিযুক্ত সাত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে সাইফুর রহমান নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই ছাত্রাবাসে সাইফুরের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি পাইপগান, চারটি রামদা’, একটি ছুরি ও দু’টি লোহার পাইপ।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসেন এক দম্পত্তি। রাত ৯টার কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী স্বামীকে মারধোর করে স্ত্রীকে ছিনিয়ে মহিলা ছাত্রী নিবাসে নিয়ে যায়। পরে স্ত্রীর পিছু পিছু স্বামী ছাত্রাবাসে পৌঁছলে তাকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে ছাত্রলীগ কর্মীরা। একপর্যায়ে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে আসা ওই বধুকে ৫-৬ জন ছাত্রলীগ কর্মী পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে পৌঁছলে ছাত্রলীগ কর্মীরা পালিয়ে যায়।
এদিকে গুরুতর অবস্থায় ওই বধূকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। স্ত্রীর সঙ্গে হাসপাতালেও রয়েছেন স্বামী। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) জ্যোর্তিময় সরকার জানিয়েছেন, পুলিশ গিয়ে স্বামী-স্ত্রীকে ছাত্রী নিবাস থেকে উদ্ধার করে। এরপর স্ত্রীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নবনির্মিত ওই ছাত্রী নিবাসটি ফাঁকা রয়েছে। এ কারণে সেখানে বখাটেরা রাতে আড্ডা দিতো।
এদিকে-ধর্ষক ছাত্রলীগ কর্মীরা টিলাগড়ের রঞ্জিত গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে। তারা করোনাকালে ফাঁকা হোস্টেলে আড্ডার পাশাপাশি মাদক সেবন করত বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। তারা জানায়, এ নিয়ে বার বার অভিযোগ জানালেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।