সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

টিকিট যার ট্রেন তার

যা যা মিস করেছেন

‘ট্রেনের টিকিট বিক্রয় বা হস্তান্তরযোগ্য নয়’- রেলের শত বছরের পুরোনো আইনের এ ধারার প্রয়োগ শুরু হয়েছে গত রোববার থেকে। গত দু’দিনে কেনা টিকিট হাতে নিয়েও গতকাল কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেননি অনেক যাত্রী। রেলের মহাপরিচালক মো. শামসুজ্জামান বলেন, সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে দেওয়া হবে। কিন্তু আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট শুধু অনলাইনেই বিক্রি হবে। এ সিদ্ধান্তকে টিকিট কালোবাজারি বন্ধের উপায় বলছেন মহাপরিচালক। তবে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্য কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, রেল ‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিয়েছে’। রেলের অভ্যন্তরে যেসব অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, তা আগে দূর করুক, কালোবাজারি এমনিই বন্ধ হবে। কালোবাজারি বন্ধের নামে যাত্রীকে শাস্তি দেওয়ার যুক্তি নেই। আবুল মকসুদ জানান, তিনি নিজেও ইন্টারনেটের ব্যবহার জানেন না। মোবাইল বা অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা তার নেই। তাহলে তিনি কী করে ট্রেনে চড়বেন? এ প্রশ্ন প্রযুক্তি সুবিধার বাইরে থাকা সব প্রান্তিক মানুষেরই।
রেল মহাপরিচালক বলেছেন, যারা ইন্টারনেটের ব্যবহার জানেন না তারা অন্যের সহায়তা নিয়ে টিকিট কাটতে পারবেন। এ জন্য শুধু তার জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ‘রেল সেবা’ অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। টিকিট যার নামে হোক, যে কারও মোবাইল বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টিকিটের দাম পরিশোধ করা যাবে।
ইন্টারনেট, স্মার্টফোনের ব্যবহার যাদের সামর্থ্যের বাইরে তাদের কী হবে? এ প্রশ্নে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা লোকাল, মেইল, কমিউটার ট্রেনে চড়তে পারবেন। এর জবাবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের মন্তব্য হচ্ছে- এই সাধারণ মানুষের স্বল্প খরচে যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যই রেলে বছরে হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয় সরকার। গত অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে রেল পরিচালনায়। কিন্তু যাদের জন্য ভর্তুকি, সেই প্রান্তিক মানুষের ট্রেনে চড়ার সুযোগ সীমিত হয়েছে শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়ায়। ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতির কারণে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার জানেন না, তাদের টিকিটের জন্য পরনির্ভরশীল হতে হয়েছে। বাংলাদেশ শুধু নয়, উপমহাদেশের প্রায় সব দেশেই ট্রেনকে সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী পরিবহন হিসেবে গণ্য করা হয়। নিয়মের বেড়াজালে যদি আর যাত্রীবান্ধব না-ই থাকে তাহলে ট্রেন কার জন্য চলবে- এমন প্রশ্নও তুলেছেন সচেতন মানুষ।
করোনার কারণে ৬৮ দিন বন্ধ রাখার পর গত ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে যাত্রীবাহী ট্রেন চলছে। সে সময়ে ১০২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেনের ১৯টি চালু হয় দুই দফায়। ১১ দিন পর যাত্রী সংকটে বন্ধ হয় দুটি। গত রোববার ১২টি আন্তঃনগরসহ আরও ১৩টি যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হয়েছে। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় ট্রেনের ধারণ ক্ষমতার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। আগামী ৩১ আগস্টের পর পুরোদমে ট্রেনসেবা চালুর পরিকল্পনা করছে কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে ‘এক্সপ্রেস’ ট্রেনে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রির সিদ্ধান্ত হলেও বিশ্বের কোথাও এ নজির নেই। ভারতসহ প্রায় সব দেশে করোনার লকডাউন শেষে অনলাইনের পাশাপাশি স্টেশনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।
অনলাইনে একজন যাত্রী সপ্তাহে দু’বারে আটটির বেশি টিকিট কাটতে পারেন না। যারা ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী, অফিস করেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে। তারা বলছেন, সপ্তাহে অন্তত ১০টি টিকিট দরকার তাদের। কিন্তু দু’বারের বেশি টিকিট কেনার সুযোগ নেই।
ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে থাকা মানুষকে আরেকজনের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও বাস্তবতা হচ্ছে- অধিকাংশ রুটে সকাল ৬টায় টিকিট ছাড়ার পর কয়েক মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। গত শনি, রবি ও সোমবার দেখা যায়, ৬টা এক মিনিটে ঢাকা-জামালপুর রুটের ‘ব্রক্ষ্ণপুত্র’ ও ‘তিস্তা’ ট্রেনের প্রায় সব টিকিট শেষ। ভোর রাতে একজন যাত্রী কীভাবে আরেকজনের সাহায্য নেবেন; এর জবাব নেই রেলের কাছে।
করোনায় সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় বাসেও অর্ধেক আসন খালি রাখা হচ্ছে। এতে ভাড়া বেড়েছে ৬০ ভাগ। ভাড়া বাড়ায় যাত্রীর চাপ বেড়েছে ট্রেনে। দরিদ্র মানুষ পথ খরচ বাঁচাতে ট্রেনের দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু এ দুঃসময়ে রেল তাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আরামদায়ক যাত্রার জন্য বৃদ্ধ, শিশুদের পছন্দের বাহনও ট্রেন। ১৮ বছরের কম বয়সীরা জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে টিকিট কাটতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। তিনি গত রোববার বলেছেন, টিকিট কালোবাজারি বন্ধে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আরেকজনের নামে কেনা টিকিটে ভ্রমণ বন্ধে নিয়মের প্রয়োগ করা হচ্ছে। অনলাইনে টিকিট কাটায় ট্রেন খালি যাচ্ছে না। তার দাবি, যা কিছু করা হচ্ছে যাত্রীদের সুবিধার জন্যই। কাউন্টারে টিকিট না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেছেন, এখনও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দূর থেকে এসে কেউ যদি দেখে কাউন্টারে টিকিট নেই, তাহলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security