মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

করোনার এই মহামারিতে শিশুর মানসিক যত্ন নিবেন যেভাবে

যা যা মিস করেছেন

করোনার এই অস্থির সময় ছোট, বড়, বৃদ্ধ সকলকেই প্রভাবিত করছে। বড়রা যেমন একটা আতঙ্কিত সময় পার করছে, ঠিক তেমনি ছোটদের মনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিশুরা অনেক কোমল মনের হয়, তারাও বিভিন্ন চাপমূলক পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তবে তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন হয় ভিন্ন। বড়দের অনুভূতিগুলো পরিস্থিতির ধরন অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। কিন্তু শিশুরা তাদের ভালোলাগা-মন্দলাগা ভিন্নভাবে প্রকাশ করে।

দেখা যায় কোনো চাপমূলক পরিস্থিতিতে যদি শিশু মানসিক চাপ অনুভব করে, তখন সে খুব চুপচাপ হয়ে যাবে, তার সব কাজকর্ম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবে, কোনো কিছুই করতে তার ভালো লাগবে না। তার মাঝে একটা অস্থিরতা কাজ করবে, হঠাৎ করে অনেক রেগে যেতে পারে, জিনিসপত্র ছুঁড়ে রাগ প্রকাশ করতে পারে, কোনো কারণে সামান্য বকাঝকা করলেও অনেক বেশি অভিমান বা কান্নাকাটি করতে পারে, আবার অনেক সময় মানসিক চাপ থেকে রাতে ঘুমের মাঝে বিছানাও ভিজিয়ে ফেলতে পারে। তাই ছোটদের মনের যত্ন নিতে হবে অনেক বেশি এবং ভিন্ন উপায়ে।

এই কঠিন সময়ে বাচ্চাদের বিভিন্ন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বা অনুভূতির প্রকাশ কঠোরভাবে না নিয়ে মানবিক হতে হবে। তাদের সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনতে হবে এবং তাদের দিকে আবেগীয় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। অন্য সময়ের তুলনায় এই সময়ে তাদের দিতে হবে বেশি ভালোবাসা ও মনোযোগ।

করোনার এই সংকটময় মুহূর্তে বাচ্চারাও বড়দের মতোই গৃহবন্দি। তারা স্কুলে যেতে পারছে না, খেলার সঙ্গীদের সঙ্গে খেলতে পারছে না, বা বাইরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে বাড়ির অন্য সদস্যদের ভালোবাসা এবং মনোযোগ তাদের অনেক বেশি প্রয়োজন। তাদের সঙ্গে বেশি বেশি সময় কাটাতে হবে, নরম সুরে কথা বলতে হবে, দয়াশীল হতে হবে, বারবার আপনার আচরণ দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে ও বোঝাতে হবে যে, আপনি তার প্রয়োজনে সর্বদা পাশে আছেন।

আপনার শিশুর দৈনন্দিন যে কাজকর্ম ছিল, তা চালিয়ে যেতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় তবে তাতে সামান্য পরিবর্তন আনা যেতে পারে। টিভি, ইন্টারনেট বা অন্য মাধ্যমে তার পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে গৃহবন্দি থেকেও সে পিছিয়ে না পরে। বাসায় খেলার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করে দিতে হবে। খেলার মাধ্যমে বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তার মন শান্ত থাকে এবং মানসিক চাপকে ভুলে থাকে। বাসায় এমন কিছু ইনডোর গেমস-এর আয়োজন করতে পারেন যেটাতে আপনি ও আপনার বাচ্চা দুজনই অংশগ্রহণ করতে পারেন। অনলাইনে বা মোবাইলের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভ কিছু করার জন্য উৎসাহিত করতে পারেন, বাসার বিভিন্ন জিনিস দিয়ে নতুন কিছু বানানো শেখাতে পারেন, কাগজ দিয়ে অরিগামি বানানো শেখাতে পারেন, আপনার বা বাসার অন্য সদস্যদের ছোটখাটো কোনো কাজে তাকে সাহায্য করার জন্য বলতে পারেন এবং কাজ করার পর অবশ্যই তার প্রশংসা করতে ভুলবেন না।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বাচ্চারা এখন কয়েকটি নতুন শব্দ শুনতে পাচ্ছে যা তাদের মাঝে উদ্বেগ ও কৌতূহল সৃষ্টি করছে, যেমন: লকডাউন, কোয়ারেন্টিন ইত্যাদি। এই শব্দগুলো তাদের কাছে একদমই নতুন এবং অনেকেই এগুলোর অর্থ জানে না। যেহেতু, করোনা হতে উদ্ভূত পরিস্থিতিটি তাদের কাছে নতুন, তাই এ ব্যাপারে তাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলতে হবে। তাদেরকে তাদের বয়স অনুযায়ী উপযুক্ত শব্দের মাধ্যমে পুরো ঘটনাটি কী হচ্ছে এবং কীভাবে আমরা সতর্ক ও সাবধান থেকে এই রোগ থেকে রক্ষা পাবো- তা বোঝাতে হবে। তাদের সাথে খেলার ছলে আপনি হাত ধোওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢাকা, মাস্ক পরিধান করার পদক্ষেপগুলি শেখাতে পারেন। যদি এই রোগে পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়, তবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য তাকে হাসপাতালে যেতে হবে ও ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে- সে ব্যাপারেও তাকে বোঝাতে হবে ও আশ্বস্ত করতে হবে যাতে আপনার শিশু ঘাবড়ে না যায়।

পরিবারের যেকোনো একজন সদস্য যেন সবসময় আপনার বাচ্চার সঙ্গে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বাচ্চাকে এই পরিস্থিতিতে একা সময় কাটাতে না দেওয়াই ভালো। যদি করোনার কারণে বা অন্য কোনো অসুস্থতার কারণে আপনার শিশুকে হাসপাতাল বা অন্য কোথাও থাকতে হয় তবে সবসময় তার সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন এবং তাকে আশ্বস্ত করে তার ভয় দূর করুন।

সবাই সুস্থ থাকুন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে নিরাপদে থাকুন এবং মানসিক শক্তি বজায় রাখুন।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security