বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

শনাক্তের ১০১ দিনে মৃত্যু লাখ ছাড়াল

যা যা মিস করেছেন

হুবেই প্রদেশের উহান শহরে বেশ কয়েকজন সংক্রমিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নতুন ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্তের খবর জানিয়েছিল চীন। পরে সেই ভাইরাস সৃষ্ট রোগের নাম দেওয়া হয় কভিড-১৯। অল্পদিনের মধ্যেই বৈশ্বিক মহামারির রূপ নেয় সংক্রামক এ রোগ। প্রাণঘাতী ভাইরাসটি শনাক্তের ১০১তম দিনে গতকাল শুক্রবার বিশ্বে মৃতের সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। আক্রান্ত ১৬ লাখের বেশি, যার মধ্যে বাংলাদেশে ২৭ জনের মৃত্যু এবং ৪২৪ জন আক্রান্তও রয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, ভাইরাসটির বর্তমান কেন্দ্রস্থল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার প্রথমবারের মতো নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনে। তাতে আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল ২১০-এ দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এ তথ্য জানিয়েছে।

করোনার কোনো কার্যকর প্রতিষেধক উদ্ভাবিত না হওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে এখন পর্যন্ত রক্ষণাত্মক কৌশলেই এগোচ্ছে বিশ্ব। কোথাও কোথাও আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও জনগণের জীবনযাত্রা শিথিল করার সাহস দেখাতে চাইছে না প্রায় কোনো রাষ্ট্রই। উল্টো নতুন নতুন কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে।  সারা বিশ্বেই লকডাউনসহ বিভিন্ন বিধি-নিষেধের মেয়াদ আরো দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বৈশ্বিক এই সংকট মোকাবেলায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থার মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়াল বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ করোনাভাইরাস। সবাইকে এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।

করোনা মহামারির মধ্যে বড় সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা প্রকাশ করে গুতেরেস বলেন, এই মহামারির জেরে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে। ফলে বাড়তে পারে হিংসাত্মক কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী হামলার মতো ঘটনা, যা যথেষ্ট উদ্বেগের।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, এখন একজোট হতে হবে। এই মহামারি পরিস্থিতিতে শান্তিপ্রক্রিয়া বজায় রাখতে হবে নিরাপত্তা পরিষদকে। করোনার নেতিবাচক ফল সুদূরপ্রসারী হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমায় পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার আভাস মিলছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এক হাজার ৭৮৩ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মৃতের এ সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কম। আগের দিন দেশটিতে করোনাভাইরাসে এক হাজার ৯৭৩ জনের মৃত্যু ঘটে। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৬টায় জন হপকিনস ইউনিভার্সিটি এ তথ্য জানিয়েছে।

এ পর্যন্ত বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ। মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজারের বেশি। গত দুদিন সার্বিক পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও এখনো নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার এক দিনে সর্বোচ্চ ৭৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে গভর্নর এন্ড্রু কোমো বলেছেন, হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে আসা অব্যাহত রয়েছে। কোমো বলেন, ২৪ ঘণ্টায় ৭৯৯ জন মারা গেছে, বুধবার এ সংখ্যা ছিল ৭৭৯ জন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে করোনা সংক্রমণের বিস্তার হ্রাস পাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ পুনরায় বৃদ্ধি রোধে নিউ ইয়র্কের মেয়র রাজ্যব্যাপী স্কুল ও জরুরি নয় এমন ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়সীমা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন। অবশ্য এরই মধ্যে নিউ ইয়র্কে এক লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষের দেহে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যায় এ অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অন্য সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে।

বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত এখন স্পেনে। সেখানে এক লাখ ৫৭ হাজারের বেশি মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার। গতকাল সেখানে ৬০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা গত ১৭ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন। স্পেন এখন করোনাভাইরাস মহামারির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিটি পেরিয়ে যাওয়ার পথে—এমন আশা প্রকাশ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ।

আক্রান্তে তৃতীয় সর্বোচ্চ ইতালিতে সংক্রমিতের সংখ্যা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ছিল এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭৭ জন। সেখানেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা কমতে শুরু করছে। যদিও দেশটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ প্রাণহানির দেশ, ১৮ হাজার ৮৪৯ জন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইতালিতে চলমান অবরুদ্ধদশা আগামী ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী জুজুপ্পে কোন্তে।

বেলজিয়াম শুক্রবার জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৪৯৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তাতে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৯ জনে। আর দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনার কেন্দ্রস্থল দায়েগু শহরে গতকাল প্রথমবারের মতো নতুন রোগী শনাক্ত হয়নি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত মোট ২০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ১৪২ জনই দায়েগু শহরের।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সর্বোচ্চ মৃত্যুহারের দেশ ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তাকে আংশিকভাবে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে গতকাল সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে নতুন করে ১২২ জনের প্রাণহানি হয়েছে। তাতে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ২৩২ জনে।

এদিকে প্রতিবেশী ভারতে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ১৯৯ জন হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৬০ জনে। দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্তের মধ্যে ৫১৫ জন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ৩০ জনের মধ্যে মহারাষ্ট্রে মারা গেছে ২৫ জন, দিল্লিতে তিনজন, গুজরাট ও ঝাড়খণ্ডে একজন করে মারা গেছে।

ইইউর ৫৫ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা

এদিকে নভেল করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ইউরোপের দেশগুলোকে সহায়তায় ৫৫ হাজার কোটি ডলারের প্রণোদনা প্যাকেজের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থমন্ত্রীরা। ব্রাসেলসে টানা আলোচনার পর বৃহস্পতিবার রাতে ইউরো গ্রুপের চেয়ারম্যান মারিয়ো সেন্টেনো এ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার ঘোষণা দেন।

ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা

ইয়েমেনে হুতি বাহিনীর সঙ্গে লড়াইরত সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী দুই সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের নেওয়া উদ্যোগের সমর্থনে বৃহস্পতিবার থেকে এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।

পশ্চিমা সামরিক শক্তিগুলোর সমর্থনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ ইয়েমেনের হুতি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। সৌদি জোটের ঘোষিত যুদ্ধবিরতি হুতিরাও মেনে চলবে কি না তা পরিষ্কার হয়নি।

চীনের সুইফেনহে শহর অবরুদ্ধ

কভিড-১৯-এর প্রকোপ কমে আসায় উহানসহ চীনের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একে একে লকডাউন ও অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠলেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাশিয়ার সীমান্তলাগোয়া সুইফেনহেতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছিল। এ জন্য কর্তৃপক্ষ শহরটিকে সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সুইফেনহে শহরটি বেইজিং থেকে এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত। কর্তৃপক্ষ শহরটির বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। চীনে করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল উহানের জীবনযাপন এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।

পদত্যাগ করলেন অস্ট্রেলিয়ার সেই মন্ত্রী

জরিমানার পর গতকাল পদত্যাগ করেছেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকারের শিল্পকলামন্ত্রী ডন হারউইন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় রাজ্যে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের দায়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে জরিমানা করেছিল দেশটির পুলিশ বিভাগ।

ডন হারউইন কয়েক সপ্তাহ ধরে তাঁর সিডনির পূর্ব শহরতলির মূল বাড়ি থেকে প্রায় এক ঘণ্টা দূরত্বের সেন্ট্রাল কাস্টের অবকাশকালীন বাড়িতে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত এবং পূর্ব শহরতলির ইস্ট গার্ডেন্স ওযয়েস্টফিল্ড শপিং সেন্টারে কেনাকাটা করছেন বলে অভিযোগ ওঠে। বৃহস্পতিবার প্রমাণসহ এটি প্রকাশিত হলে তাঁকে এক হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। এরপর তিনি ক্ষমা চেয়ে সিডনির বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security