...
রবিবার, এপ্রিল ২৮, ২০২৪

এবার ‘শক সিন্ড্রোমে’ ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি

যা যা মিস করেছেন

গত ২৩ আগস্ট ঢাকা শিশু হাসপাতালে মারা যায় ৮ বছরের মো. আবরার হক কাওসার আলী শেখ আরিয়ান। আরিয়ানের ডেথ সার্টিফিকেটে চিকিৎসকরা মৃত্যুর কারণ হিসেবে লিখেছেন— ‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম’। একই হাসপাতালে গত ১৬ আগস্ট মারা যায় ছয় মাস বয়সী আয়য়াজুর রহমান। আয়য়াজুর ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহীন শরীফ।

তার ঠিক আগের দিন ১৫ আগস্ট দুপুরে মারা যায় দুই বছর ১০ মাস বয়সী রাজ চৌধুরী। রাজ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. নির্মল কান্তি ‍চৌধুরীর ছেলে। হৃদরোগ হাসপাতালের চিকিৎসক ও শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শাহীন শরীফ জানান, প্রথমে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করা হয় জ্বরে ভোগা রাজকে। কিন্তু সেখানে তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে শিশু হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়। ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম আক্রান্ত রাজ দুদিন আইসিইউতে থাকার পর মারা যায়।

এদিকে, গত ২৩ জুলাই মহাখালীতে অবস্থিত ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় এক বছরআট মাস বয়সী সৌম্য বিশ্বাস। হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী সৌম্যর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সৌম্যর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল ছিল, শিশুটি ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিল।’

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত ৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ( আইইডিসিআর)। তাদের কাছে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ২০৩টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হয়, সেখান থেকে আইইডিসিআরের ডেথ রিভিউ কমিটি শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ১১৬টি মৃত্যুর ঘটনা পর্যালোচনা করে ৬৮টি মৃত্যু ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে বলে জানায়। যদিও চলতি মাসে (সেপ্টেম্বর) তারা মৃত্যুর হিসাব দেয়নি। ৬৮টি মৃত্যুর মধ্যে

আইইডিসিআর থেকে চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের বয়সের হিসাবে দেখা যায়— এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এক বছরের কম বয়সী দুই শতাংশ, এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে সাত শতাংশ, পাঁচ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ১৭ শতাংশ, ১৫ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ৩১ শতাংশ, ২৫ থেকে ৩৫ বছর পর্যন্ত বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ২১ শতাংশ, ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে ১০ শতাংশ, ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছে সাত শতাংশ, ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার তিন শতাংশ এবং ৬৫ বছর থেকে এর বেশি বয়সীরা আক্রান্ত হয়েছেন দুই শতাংশ। এসব বয়সের মানুষের মধ্যে এবার বেশি মৃত্যু হয়েছে ‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে।

আইইডিসিআর জানায়, এবার যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের ৬৮ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে ‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে। আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন— এবার শুরু থেকেই ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে, যে কারণে সাধারণ মানুষসহ চিকিৎসকরাও অনেকটা দ্বিধায় ছিলেন। এবার ডেঙ্গু হলেই আগের চেনা ধরন দেখা যায়নি। এবার ডেঙ্গু জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত হয়েছে হার্ট, কিডনি ও ব্রেইন। রোগীর মাল্টি অর্গান ডিসফাংশন হয়েছে। যে কারণে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি যে বেড়েছে— তা বোঝা যায়নি। কিন্তু যখন রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে, তখন চিকিৎসা করার মতো কিছু অবশিষ্ট থাকেনি। আর শিশুদের বেলায় এটি ছিল আরও ভয়ঙ্কর।

ইউনির্ভাসেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ চক্রবর্তী তার হাসপাতালে সৌম্য বিশ্বাসের মারা যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘‘ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম হচ্ছে ডেঙ্গুর সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। এতে আক্রান্তের রক্তচাপ থাকে না, এ কারণে মাল্টি অর্গান ডিসফাংশন হয়। সৌম্যের ফুসফুস দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বলা হয় ‘পালমোনারি হেমোরেজ’। আর সৌম্যকে পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) রাখা হলেও অবস্থা ছিল খুব ক্রিটিক্যাল। তাকে আরেকটি হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গু সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে এখানে ভর্তি করা হয়েছিল। শিশুটি ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।

এদিকে, মিলেনিয়াম হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়া ইশরা তাসকিন অস্মিতার বিষয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের ইনচার্জ ডা. মোহাম্মদ সুলতান পারভেজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অস্মিতা মূলত খিঁচুনি নিয়েই আমাদের কাছে আসে। লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হলেও তখন আর আমাদের কিছু করার ছিল না। আমরা চেষ্টা করেছি, কিন্তু অস্মিতাকে ফেরাতে পারিনি। সে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিল।’

ডেঙ্গুর ধরন নিয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আগে যেসব উপসর্গ দেখা যেত, সেসব এখন হয় না বলে মানুষ বুঝতে পারছেন না। তাই চিকিৎসকের কাছে যেতেও দেরি করছে। কিন্তু এই দেরিতেই সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে।’

অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, ‘এবারে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।’

অন্যদিকে, প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবারে ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। শরীরে একদমই র‌্যাশ নেই, হয়তো কিছুটা মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা হচ্ছে। হঠাৎ করেই শকে চলে যাচ্ছে।’

‘শক’ কী জানতে চাইলে লেলিন চৌধুরী বলেন,‘যখন রোগীর নাড়ির গতি অনেক বেড়ে যায়, হৃদপিণ্ডের গতি অনেক বেড়ে যায়, ব্লাডপ্রেসার কমে যায়, পানিশূন্যতা দেখা দেয়, তখন তাকে ‘শক’ বলা হয়। এই শক সিন্ড্রোমের রোগী এবার বেশি পাচ্ছি।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security
Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.