দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোর সম্ভাব্য রায় নিয়ে চিন্তিত নয় বিএনপি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা মনে করেন, মামলায় রায় নিয়ে দলের চেয়েও বেশি চিন্তা সরকারের। তাদের ধারণা, বর্তমান পরিস্থিতিতে মামলাগুলোর তেমন ভিত্তি ও আইনি জোর নেই।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ ও নিম্ন আদালত সহ কয়েকটি আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, জিয়া অরফানেজ, নাইকো ও গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা এবং রাজনৈতিক মামলা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অন্তত ২৫টি মামলা চলমান। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ চলাকালীন গাড়ি পোড়ানো, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং বক্তব্য কেন্দ্রিক মামলা রয়েছে প্রায় ১১টি।
বিএনপির নেতাকর্মীদের অভিমত, খালেদা জিয়ার মামলাগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই চলবে। আদালতের রায় নিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত নন। তাদের মতে, খালেদা জিয়া আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দেন। তারা নিশ্চিত, রায়ে রাজনৈতিক প্রভাব থাকলে সেটি সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, খালেদা জিয়ার বিভিন্ন মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘সব মামলাতেই চার্জশিট গঠন করা হবে। নিম্ন আদালতে রায়ের পর হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াই চলবে। খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে আমরা আতঙ্কিত নই।’
খালেদা জিয়াকে ‘জনপ্রিয় রাজনীতিক’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা রিস্কি। সরকার এটার চেষ্টা করবে বলে মনে হয় না। আমরা আইনের পথেই তার মামলাগুলো মোকাবিলা করব। বিএনপি সাংবিধানিক দল, তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র আছে, নির্বাচনকেই তারা গণতান্ত্রিক পথ মনে করে। তাই আইনের পথে লড়াই-ই প্রধান পথ।’
বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদেরও তেমনই অভিমত। তিনি বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠানোর মতলব করে থাকলে তা বিএনপির জন্যই শুভ হবে। দল এখন যেটুকু নড়েবড়ে আছে তা দূর হবে, দল আরও চাঙ্গা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করলে বা জেলে ঢোকালেই বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। এটা বাড়াবাড়ি হবে, দুঃসাহসী কাজ হবে। জিয়ার আদর্শে অগ্রসর হতে চাইলে খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের বিকল্প নাই।’
ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এ বিষয়ে বলেন, ‘সরকার নানা কারণে ভীত। আর এই ভয় তাড়াতে চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার বা তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে বেড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। আইনি মোকাবিলা চলছে, প্রয়োজনে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
ছাত্রদলের সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বলেন, ‘গ্রেফতার রাজনৈতিক জীবনের অপরিহার্য বিষয়। অতীতেও ম্যাডামকে গ্রেফতার করে দল ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে লাভ হয়নি। বরং যারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারাই লজ্জিত হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের স্বপ্ন সরকার দেখে থাকলেও বাস্তবে তা অনেক দূর।’
তিনি আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এক-এগারোর সময়ের রাজনৈতিক মামলা আছে। যে মামলা ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও। তাই দেশে-বিদেশে এর কূটকৌশল সম্পর্কে সবাই জানে।’
খালেদা জিয়ার মামলাগুলো নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবিদ ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসনের মামলাগুলো চলছে, চলুক। রায়ের আগেই তাকে কারাগারে পাঠানোর চিন্তা বা ভিন্ন কোনও চিন্তা করা ঠিক নয়। আমাদের দেশের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য নির্ভর রাজনীতির এটা একটা সমস্যা যে রায়ের আগেই সব কিছু চিন্তা করে ফেলা হয়। এটা ঠিক নয়। এখানে উচ্চ আদালত আছেন। তাই রায়ের অপেক্ষা করাই আমাদের জন্য উত্তম। আমি এর বেশি মন্তব্য করতে চাই না।’