সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

লাঠিখেলা উৎসবে মুগ্ধ কুষ্টিয়ার দর্শক

যা যা মিস করেছেন

Kustia the mail bd

আবহমানকাল ধরে গ্রাম-বাংলার নানা উৎসব-পার্বণে চিত্ত বিনোদনের খোরাক জোগাতো লাঠি খেলা। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী কেন্দ্রীয় দপ্তরের উদ্যোগে কুষ্টিয়ায় শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী লাঠি খেলা উৎসব।

শরীরে বিশেষ পোশাক আর হাতে লাঠি। ঘুরছে শাঁই-শাঁই। ঢোলক, ঝুমঝুমি, কাড়া এসব বাদ্যযন্ত্রের তালে চলছে নাচ। লাঠি দিয়ে চলছে সড়কি, ফড়ে, ডাকাত ডাকাত, বানুটি, বাওই জাক, নড়ি-বাড়িসহ নানা নামীয় কৌশলের খেলা। খেলোয়াড়রা নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে।

কুষ্টিয়া সরকারী কলেজ মাঠে ছিল এর মূল আয়োজন। শনিবার বেলা ৩টায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়নুল আবদিন, প্রবীণ সাংবাদিক ওয়ালিউল বারী চৌধুরীসহ সরকারী কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

খেলোয়াড় মিন্টু সর্দার বলেন, এই খেলাটি ক্ষমতা ও শৌর্যের প্রতীক। নিয়মিত চর্চার পাশাপাশি এক সময় খেলাটি বর্ষবরণ, পূজা-পার্বণসহ নানা উৎসবে বড় পরিসরে আয়োজন করা হতো। অথচ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে এই লাঠি খেলা।

খেলা দেখতে এসেছিলেন এডভোকেট শামস তানিন মুক্তি। তিনি মুগ্ধ এই লাঠি খেলায়। বলেন, ‘নানা প্রতিকুলতার কারণে লাঠি খেলা বিলুপ্তির পথে, অন্যদিকে নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না। সে কারণে খেলাটিকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া অত্যাবশ্যক। বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর এই আয়োজনকে স্বাগত জানান তিনি।

শনিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া দুইদিনের এই লাঠি উৎসব শেষ হচ্ছে আজ বিকালেই। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগই ঐতিহ্যবাহী খেলাটি টিকিয়ে রাখতে পারে, জানালেন লাঠিয়াল বাহিনী কেন্দ্রীয় দপ্তরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল¬াহ আল মামুন তাজু।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে মাঠে নামেন লাঠিয়ালরা। তারা কখনও ঢোল আর কাঁশরের তালে তালে নেচে নেচে তাদের কসরত দেখান, আবার কখনও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে লাঠি চালান। প্রতিপক্ষ লাঠিয়াল সেই আঘাত ঠেকিয়ে প্রতিঘাত করতে সদা প্রস্তুত বেতের তৈরী ঢাল আর লাঠি নিয়ে। আবার কেউ কেউ বন বন করে লাঠিয়ে ঘুরিয়ে দর্শকদের মন কাড়েন।

 এবার নারী লাঠিয়ালরাও পুরুষ লাঠিয়ালদের কুপোকাত করছেন। দর্শকদের আনন্দে তখন যোগ হয় নতুন মাত্রা। লাঠিয়ালদের মধ্যে ১০/১২ বছরের শিশু থেকে রয়েছেন ৭০/৮০ বছরের বৃদ্ধও।
নড়াইল থেকে আসা লাঠিয়াল হায়াত আলী বলেন, এই লাঠি খেলা তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। তার বাবা ও দাদা এক সময় লাঠি খেলতেন, সেই ঐতিহ্য তিনি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে পাবনার ঈশ্বরর্দীর লাঠিয়াল ইসমত আরা মনে করে, এটা নিছক একটি খেলা নয়। এর থেকে আত্মরক্ষার কৌশলও শেখা যায়।
বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনীর সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু জানান, প্রাচীণকালে জমিদাররা শক্র দমনে লাঠিয়াল পুষতেন। জমিদারী প্রথা বিলোপের পর লাঠিয়ালদের প্রয়োজন ফুরালেও তাদের বংশধররা এটাকে খেলা হিসেবে আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন।
তিনি বলেন, তার নানা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে ওস্তাদ ভাই লাঠিখেলা বাঁচিয়ে রাখতে ও সারা দেশের লাঠিয়ালদের সংগঠিত করতে একটি সাংগঠনিক কাঠামো তৈরী করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ লাঠিয়াল বাহিনী। আর্থিক দৈন্যতাসহ নানা কারণে লাঠিয়ালদের সেইভাবে সংগঠিত করা সম্ভব না হলেও তারা যথা সাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান, আব্দুল্লাহ আল মামুন তাজু।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান বলেন, লাঠিখেলা দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খেলা। তবে আধুনিক খেলাধুলার ভীড়ে এই ঐতিহ্যবাহী খেলা হারিয়ে যেতে বসেছে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগে একে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security