সোমবার, এপ্রিল ২৯, ২০২৪

যে কারনে বিমানবাহিনী থেকে নায়ক হলেন রিয়াজ

যা যা মিস করেছেন

riyaz-the-mail-bd

বাংলা সিনেমা প্রেমীদের খুবই পছন্দের নায়ক হিসেবে রিয়াজ অক্ষয় হয়ে আছেন আর তাই তাকে নিয়ে ভক্তদের কৌতূহল অনেক। আজ চিত্রনায়ক রিয়াজ কে নিয়েই আমাদের আলোচনা:

পরিচিতিঃ

নাম রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক যিনি কিনা রিয়াজ নামেই বেশি পরিচিত এবং বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমিদের অন্যতম পছন্দের তালিকায় রিয়াজের নাম রয়েছে, কেননা বাংলা চলচ্চিত্রে পদার্পণ করেই অভিনয়ের সুনিপুণ তকমা দেখিয়েছেন রিয়াজ। তবে ভক্তদের কাছে তিনি বেশিরভাগ ছবিতে রোমান্টিক হিরো হিসেবে হাজির হয়েছিলেন আর এজন্য তিনি রোমান্টিক হিরো হিসেবে বেশি পরিচিত।

১৯৯৫ সালে ‘বাংলার নায়ক’ নামে একটি সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলা সিনেমা জগতে পা রাখেন রিয়াজ। এরপর ১৯৯৭ সালে মহাম্মদ হান্নান পরিচালিত ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’ চলচ্চিত্রে রিয়াজ অভিনয় করেন যা প্রচুর হিট হয় এবং দারুণ ব্যবসা করে এবং একইসঙ্গে জনসাধারণের মাঝে রিয়াজের পরিচিতি ব্যাপক হারে বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের অনেক প্রখ্যাত পরিচালকে তাকে নিয়ে চলচ্চিত্রে নির্মাণ করেন। এছাড়াও ভারতীয় চলচ্চিত্রকার ও অভিনেতা মহেশ মাঞ্জরেকারের ‘ইট ওয়াজ রেইনিং দ্যাট নাইট’ নামে একটি ইংরেজী চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। এই চলচ্চিত্রে রিয়াজ বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেনের সাথে কাজ করেছেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবনঃ

রিয়াজ ১৯৭২ সালে ফরিদপুর জেলা সদরের কমলাপুর মহল্লায় একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে ফরিদপুর শহরের সিএনবি স্টাফ কোয়ার্টার্সের চৌহদ্দিতে।

তাঁর বাবা জাইনুদ্দিন আহমেদ সিদ্দিক ছিলেন সরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা; মাতা মৃত আরজুমান্দ আরা বেগম গৃহিণী। আট ভাইবোনের মধ্যে রিয়াজ হচ্ছেন পরিবারের সবচেয়ে ছোট।

ছেলেবেলা থেকেই রিয়াজ ছিলেন উদ্যমী এবং খেলাধুলা ভালোবাসতেন ,লেখাপড়ায় ছিলেন খুবই মেধাবী। তার স্থপতি হওয়ার স্বপ্ন ছিল আর সেই স্বপ্ন পূরণের উদ্যেশে ১৯৭৭ সালে ফরিদপুর জেলা সদরে অবস্থিত তারার মেলা উইলস্ লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন। পরে ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন, সেখানে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে ফরিদপুর সদরে অবস্থিত ময়েজউদ্দীন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এসএসসি পাশ করেন।

এরপর ফরিদপুর থেকে চলে আসেন পৈতৃক বাসস্থান যশোর জেলায়। তাঁর কলেজ জীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে এবং সেখান থেকে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর বুয়েটে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকা এসে কোচিং শুরু করেন, কিন্তু পরিবারের বড়দের উৎসাহে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী একাডেমীতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

এরই মধ্যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি সম্পূর্ণ করেন। ১৯৯১ সালে তুর্কি সরকারের দেয়া একটি বৃত্তিতে তিনি টি-থার্টি-সেভেন বিমানের উপরে একটি প্রশিক্ষণ নিতে ক্যাডেট হিসেবে তুরস্ক যান। ঐ প্রশিক্ষণটিতে তিনি ভাল ফলাফল অর্জন করেন, যার ফলশ্রুতিতে তুর্কি সরকার তাঁকে একটি বিশেষ প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রদান করে। কিন্তু বিভিন্ন রকমের প্রক্রিয়াকরণের দরূন প্রশিক্ষণটি নেয়া তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে ফিরে তিনি বিমান বাহিনীতে কমিশনপ্রাপ্ত হন এবং একজন বিমান চালক হিসেবে নিয়োগ পান।

যেভাবে চলচ্চিত্রে আসাঃ

ছোটবেলায় রিয়াজের ইচ্ছা ছিল স্থপতি হবেন; পরে পরিবারের বড়দের উৎসাহে যশোরে বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দেন এবং উত্তীর্ণ হন। যথাযথ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে বিমানচালক হিসেবে যোগদান করেন। বৈমানিক হিসাবে তিনি একটি জেট ফাইটারে মোট ৩০০ ঘণ্টা উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অধীনে তুরস্ক গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। কিন্তু পরবর্তীকালে কোন কারণে তার আর বিমানবাহিনীতে চাকরি করা সম্ভব হয়নি।

চাচাতো বোন অভিনেত্রী ববিতার হাত ধরেই রিয়াজের চলচ্চিত্রে আসা। ১৯৯৪ সালে তিনি ববিতার সাথে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-তে ঘুরতে এসে প্রয়াত অভিনেতা-প্রযোজক জসিম-এর নজরে পড়েন। তখনি নায়ক জসিম রিয়াজকে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন কিন্তু রিয়াজ অভিনয় সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। এক্ষেত্রে ববিতা তাঁকে উৎসাহিত করেন, কিন্তু রিয়াজের মা ছিলেন ধর্মভীরু, তাই তার মাকে রাজি করাতে একটু সময় লেগে গিয়েছিল।

ব্যক্তিগত জীবনঃ

বাংলা চলচ্চিত্র জগতে রিয়াজ বিভিন্ন নায়িকার সাথে জুটি বেঁধে দীর্ঘদিন ব্যবসাসফল ছবিতে একসাথে অভিনয় করেছেন এবং পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। তবে দুইটি নায়িকার সাথে তিনি বেশি অভিনয় করেছেন এবং তাদের সাথে অভিনীত ছবিগুলো দারুণ সফল হয়েছিলো। তারা হলেন শাবনূর ও পূর্ণিমা। অনেক দিন একসাথে কাজ করার ফলে সখ্য গড়ে উঠে এই দুই অভিনেত্রীর সাথে। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন সময়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে রিয়াজ-শাবনূরের প্রেমের খবর প্রকাশ হতে থাকে। এমনকি তাদের প্রেম ও গোপন বিয়ের খবর ঝড় তুলেছিল ২০০০ সালের প্রথম পর্যন্ত চলচ্চিত্র এবং এ অঙ্গনের বাইরে।এছাড়া পূর্নিমার সাথেও তার সম্পর্কের খবরও কিছুদিন লোকমুখে শোনা গিয়েছিল। রিয়াজ ২০০৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর ২০০৪-এর বিনোদন বিচিত্রার ফটো সুন্দরী বিজয়ী মডেল মুশফিকা তিনার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের প্রায় আট বছর পর ২০১৫ সালের ১ জুন তিনি কন্যা সন্তানের পিতা হন।

তবে বর্তমানে তাকে সিনেমায় দেখা যাচ্ছে না কিন্তু দু-একটি নাটকে অভিনয় করেছেন। এছাড়া জনপ্রিয় অভিনেতার খেতাব পাওয়ার পর এখন ব্যবসার দিকে মনোযোগী রিয়াজ আর তাই রাজধানীর বসুন্ধরার আবাসিক এলাকায় একটি রেস্তেরা খুলেছেন। রেস্তেরাটির নাম ‘রেস্টুরেন্ট ফুড টোয়েন্টিফোর ইনটু সেভেন’

সফল নায়ক রিয়াজঃ

রিয়াজ তাঁর সুঅভিনয়ের জন্য দীর্ঘ অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একমাত্র রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে তিনি তিনবার এই পুরস্কার লাভ করেন। এবং মেরিল-প্রথম আলো পূরস্কার-এ দুইবার সমালোচকদের রায়ে সহ সর্বমোট সাত’বার সেরা চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security