আগামী ২৫ থেকে ৩১ জুলাই, প্রধানমন্ত্রীর সাতদিনের কর্মকাণ্ড কাভারেজের জন্য একসেট ডিজিটাল ক্যামেরা ও সরঞ্জামাদি কেনা প্রয়োজন। বাজেট আড়াই কোটি টাকা। কী ক্যামেরা কেনা যায়, এখন কোন প্রযুক্তি চলছে,‘প্রিশিপমেন্ট ইনসপেকশনের’ জন্য তিনজনকে জার্মানি যাওয়ার আদেশ দিয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার (তথ্য) কাছে পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভ্রমণের জন্য মনোনীতদের তালিকায় নাম আছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক লিয়াকত আলী খান ও উপপরিচালক শিপলু জামান।
উপ-সচিব নিলুফার নাজনীন স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে বলা হয়, নির্দেশিত হয়ে আগামী ২৫-৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড কাভারেজের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদতানিতব্য একসেট ডিজিটাল ক্যামেরা ও সরঞ্জামাদির প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনের নিমিত্তে জার্মানি যাওয়ার জন্য বর্ণিত কর্মকর্তাদের অনুকূলে (ভ্রমণ সময় ব্যতীত) সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে নিলুফার নাজনীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী কোনো কিছু কিনতে হলে আগে একবার দেখে আসতে হয়। এ সংক্রান্ত চিঠি আমাদের কাছে আসার পরে আমরা শুধু অনুমতি দেই। এ বিষয়ে আমি বিস্তারিত বলতে পারবো না।’
মহাপরিচালক লিয়াকত আলী খানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে কার্যালয়ের নম্বরে যোগাযোগ করলে তার ব্যক্তিগত সহকারী বলেন, ‘স্যার এখন একটা মিটিংয়ে আছেন। কী জানতে চান বলেন?’
বিদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাই বললে তিনি বলেন, ‘সরকারি কাজে বিদেশে যাচ্ছেন। এ নিয়ে মন্তব্যের কিছু নাই। আর এটাতো মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই যাচ্ছেন।’
ক্যামেরা কেনার বাজেট জানালেও তিন কর্মকর্তার আসা-যাওয়া, থাকা এবং ওই দেশে ঘোরাঘুরিতে কত টাকা লাগবে, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই বলতে চাইছেন না। তবে এই সব খরচের পাশাপাশি ওই তিন কর্মকর্তাকে আরও কিছু বৈদেশিক মুদ্রা যে দেয়া হবে সেটা নিশ্চিত করেছেন একাধিক কর্মকর্তা।
কেবল এবারই নয়, নানা সময় কেনাকাটা বা অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তাদের বিদেশে ভ্রমণের রীতি আছে। একে সরকারি কর্মকর্তারাই প্রমোদ ভ্রমণ বলে থাকেন। কখনও কখনও পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে যান কর্মকর্তারা আর নানা কৌশলে সেই টাকাও রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে আদায় করেন তারা। এ নিয়ে গণমাধ্যমে নানা সময় সমালোচনাও হয়েছে। কিন্তু এই রীতি এখনও চালু আছে।
এই যুগে ক্যামেরা বাছাই করতে বিদেশে কর্মকর্তা পাঠানোর কোনো দরকার নেই বলে মনে করেন দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘এই সিদ্ধান্তে সরকারি টাকার অপচয় ছাড়া আর কোনো লাভ হবে না।
তিনি বলেন, ‘একটি ক্যামেরা কিনতে তিনজন কর্মকর্তা জার্মানিতে যাওয়াটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা আমার জানা নেই। কারণ এখন ইন্টারনেটে ক্লিক করেই যে কোনো প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা যায়। এমনকি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোও করা যায়। তাহলে কেন কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠাচ্ছে সরকার।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠবে। ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে কতটা স্বচ্ছতা রয়েছে তা জনগণকে জানানো উচিত।’