বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনেককেই বিষাদ ও অবসন্নতা দূর করবার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ কিংবা ওষুধের সাহায্য নিতে হচ্ছে । অথচ আমাদের দেহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানসিক প্রশান্তি সৃষ্টিকারী কেমিক্যাল তৈরি করে, যেগুলো ‘এন্ডোরফিনস’ নামে পরিচিত ।
এই এন্ডোরফিনসের প্রস্তুতি হয় খাদ্যের বিশ্লেষণের মাধ্যমে, তাই যেসকল খাবার এর উৎপাদনের সহায়ক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সেগুলো চটজলদি আপনার মনকে করে তুলতে পারে উৎফুল্ল ।
অপরদিকে নির্দিষ্ট কিছু মিনারেল ও ভিটামিন যেমন ভিটামিন বি-১২, ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম, জিঙ্কের অভাবে এন্ডোরফিনের স্বাভাবিক পরিমাণ কমে যেতে পারে যা আপনাকে করে তুলবে বিষণ্ণ, অবসাদগ্রস্ত এবং এমনকি কর্মশক্তিও হ্রাস পেটে পারে । তাই কেবল অতিরিক্ত মানসিক চাপই না বরং ভুল খাবারও দায়ী হতে পারে আপনার বর্তমান অবসাদের গুরুত্বপূর্ণ কারণ ।
শুধুমাত্র সঠিক খাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমেই অবসাদ দূর সম্ভব? চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবারের কথা যা আপনার করে আপনাকে করে তুলবে আবারও আগের মত উচ্ছল এবং কর্মোদ্যমঃ
স্ট্রবেরিঃ এতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন সি যা এন্ডোরফিনের উৎপাদনকে বেগবান করে এবং আয়রনের শোষণে সাহায্য করে । এতে আরও রয়েছে পটাসিয়াম যা নার্ভের কার্যক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করে। স্ট্রবেরির মনোহারী লাল রঙের জন্য দায়ী হল অ্যান্থোসায়ানিডিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েড । এগুলো বেশ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহে উৎপন্ন অযাচিত এবং বিষাক্ত ক্যামিকেলের নিষ্কাশনে কাজ করে থাকে। স্ট্রবেরির মিষ্টতা তার নিজস্ব ভেজিটেবল সুগারের জন্যই, এতে ক্ষতিকর বাড়তি কোন কার্বোহাইড্রেড নেই । তাই মন ভরে খেতে পারেন যত খুশি তত!
বাদামঃ বাদাম খেতে কে না পছন্দ করে? অথচ এই সহজলভ্য খাবারটিতে রয়েছে ভিটামিন-বি, প্রোটিন এবং সেলেনিয়াম নামক একটি মিনারেল যা মানব মনের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখায় । বিশেষত কাঠবাদামে রয়েছে উচ্চমাত্রায় টাইরোসিন যা ডোপামিন এবং আরও কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের প্রধান উপাদান । তাই এক মুঠো কাঠবাদাম কেবল আপনার হৃদস্বাস্থ্যকেই সুরক্ষিত করবে না, বিভিন্ন ফ্যাটি এসিডের জন্য এটি আপনার মেজাজকেও রাখবে চনমনে । এতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হওয়ায় অধিক ক্যালরি বহন করে । তবে অসম্পৃক্ত ফ্যাট থাকায় এতে কোন কোলেস্টেরল নেই । ভেজিটেরিয়ানদের জন্য তাই এটি একটি ভালো প্রোটিনের উৎস ।
তিলঃ তিল প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-ই এবং ক্যালসিয়ামের একটি সমৃদ্ধ উৎস । বাদামের মতই এতে উচ্চ মাত্রায় ফ্যাট থাকলেও তা অসম্পৃক্ত এবং মানবদেহ তথা মনের জন্য উপকারী । নিরামিষভোজীদের জন্য তিল প্রোটিনের আরেকটি ভালো উৎস ।
আপেলঃ সবসময়ই হাতের কাছে পাওয়া যায় এবং আপনার অফিসের ব্যাগ কিংবা বাচ্চার টিফিনে সহজেই এঁটে যায় এই ফলটি । এতে রয়েছে কোয়েরসিটিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মস্তিষ্কের নিউরন লাইনিংকে বহিরাগত উন্মুক্ত যৌগ-মূলকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে । গবেষণায় দেখা গিয়েছে প্রতিদিন এক গ্লাস আপেল জুস ২৭% পর্যন্ত অবসন্নতা, অস্থিরতা এবং বিভ্রম হ্রাস করে । তবে আপেলের খোসাতেই রয়েছে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সিংহভাগ । তাই আপেলের চামড়া ফেলে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আজই তা পাল্টে ফেলুন ।
পালং শাকঃ এই সবুজ শাকটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও ভিটামিন-বি যা আপনার মেজাজের তাৎক্ষনিক পরিবর্তন করে । এতে আরও রয়েছে আয়রন যা প্রচুর শক্তি উৎপাদন করে এবং কোষে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে যা মস্তিস্ককে রাখে সচল এবং রোধ করে মনের দোদুল্যমানতা।