শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাচনে সভাপতি পদে টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন ফুটবল কিংবদন্তী কাজী সালাহউদ্দিন। তিনি পেয়েছেন ৮৩ ভোট। অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কামরুল আশরাফ খান পোটন এমপি পেয়েছেন ৫০ ভোট। বাতিল হয়েছে একটি ভোট।
রাজধানীর রেডিসন ব্লু হোটেলে শনিবার দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। শেষ হয় বিকেল ৫টায়। গত দুই নির্বাচনের মধ্যে এবারই ব্যতিক্রম। তা হলো, এবারই ভোট গ্রহনের হার শতভাগ। অর্থাৎ ১৩৪ জন ভোটারই দিয়েছেন ভোট। ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে বলে জানান, নির্বাচন কমিশনার মেসবাহ উদ্দীন আহমেদ। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন ফিফা ও এএফসি প্রতিনিধি সি মুন ইয়ং।
বিকেল পাঁচটার খানিক পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন ফল ঘোষণার করলে পরাজয় মেনে নেন আশরাফ।
“আমি হার মেনে নিয়েছি। ৫০ ভোটও কম ভোট না। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সালাউদ্দিন চাইলে আমি তাকে ফুটবলে সহযোগিতা করবো।”
২০০৮ সালে সালাউদ্দিন প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি হন। ২০১২ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ঘরোয়া ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পান স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের এই ফরোয়ার্ড।
ঘরোয়া ফুটবলের কিংবদন্তি সালাউদ্দিন ক্লাব ক্যারিয়ারের সোনালী সময়টা কাটান ঐতিহ্যবাহী আবাহনী লিমিটেডে; খেলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রেও।
সংগঠক হিসেবেও ঘরে-বাইরে পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন। দুই দফায় বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব পালনের আগে ছিলেন সংস্থাটির সহ-সভাপতিও। দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের টানা দুইবারের সভাপতি (বর্তমানেও দায়িত্বে আছে)। ফুটবলের বিশ্বসংস্থা ফিফার মার্কেটিং কমিটির সদস্যও ৬১ বছর বয়সী এই সাবেক ফুটবলার।
গত দুই মেয়াদে সালাউদ্দিনের সেরা সাফল্য ফুটবলকে নিয়মিত মাঠে রাখা। কোটি টাকার সুপার কাপ, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ড কাপের আয়োজন, লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আনা, সিলেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা, নিয়মিত ফুটবলার তৈরির আসর পাইওনিয়ার লিগ সচল রাখা, ঢাকার বাইরে একাধিক ম্যাচ আয়োজন তার এই দুই মেয়াদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে সালাউদ্দিনের প্যানেল সম্মিলিত পরিষদের দেওয়া ২৫ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে জাতীয় দলের সাফল্যের জন্য দেশের সকল ক্লাবকে অর্থ, কোচ দিয়ে অনুর্ধ-১৪, ১৬, ১৮ দল গঠন, বন্ধ হয়ে যাওয়া ফুটবল একাডেমি পুনরায় চালু, আন্তর্জাতিক মানের ফিটনেস সেন্টার গড়ে তোলা, প্রতিটি বিভাগে ফুটবল টার্ফ স্থাপন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে একাডেমি গড়ে তোলা, জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ (শেরেবাংলা কাপ) চালু, মাঠ সমস্যার সমাধান, জেলার ক্লাবগুলোর সমম্বয়ে ‘ক্লাব কাপ’ পুনরায় চালুর প্রতিশ্রুতিগুলোই উল্লেখযোগ্য।
তবে গত দুই মেয়াদে ঘরোয়া সূচি ঠিকঠাক অনুসরণ করতে এবং বারবার বিতর্ক জন্ম দেওয়া ফুটবলারদের দলবদলের প্রক্রিয়াকে পেশাদার পর্যায়ে নিতে পারেননি সালাউদ্দিন। এছাড়া জাতীয় দলের ব্যর্থতাও আছে। সব মিলিয়ে নির্বাচিত হলেও সালাউদ্দিনের সামনের পথটা মসৃণ থাকছে না মোটেও।