মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জান্তিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ; এখন শুধু সেই প্রতীক্ষিত প্রহরের অপেক্ষায় দেশের মানুষ।
শনিবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঘুরে দেখা গেছে, চারুকলার শিক্ষার্থীরা মূল বেদিসহ শহীদ মিনারের প্রবেশ পথ আলপনা দিয়ে রঙিন করেছে।
ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা দেশের লেখক-কবি গুণীজনের বাণী দিয়ে চিকামারা হয়েছে পাশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার আবাসিক এলাকার দেয়ালে। এছাড়া আলপনাও করা হয়েছে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন কমিটি।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে দুপুর থেকে শহীদ মিনার এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুরো শহীদ মিনার এলাকা জুড়ে লাগানো হয়েছে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)।
এই ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে শহীদ মিনার ও আশপাশের এলাকায় চার স্তর একটি নিরবিচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহীদ মিনার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “শহীদ মিনার এলাকা সিসিটিভির আওতাভুক্ত করেছি। শাহবাগ থেকে শুরু করে চাঁনখারপুল হয়ে পলাশী পর্যন্ত পুরো এলাকা সিসিটিভি’র আওতাভুক্ত করেছি, যা আমাদের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।”
চার স্তরে নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে শহীদ মিনারসহ আশেপাশে এলাকায় একটা নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমাদের এই নিরাপত্তা চাদর ভেদ করে অবৈধ কোনো ধরনের কার্যক্রম করার সুযোগ কেউ পাবে না।”
প্রতিবারের মতো দোয়েল চত্বর, শাহবাগ, চানখারপুল ও পলাশী থেকে সব ধরনের যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। সাধারণ মানুষ শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার জন্য পলাশীর দিকে অপেক্ষা করবেন।
আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, রাত ১২টার দিকে একুশের প্রথম প্রহরে দোয়েল চত্বরে দিকে দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও বিদেশি কূটনীতিকসহ ভিআইপি ব্যক্তিবর্গ আসবেন। ফুল দিয়ে আবার চাঁনখারপুল হয়ে চলে যাবেন।
তার পর রাত পৌনে ১টার দিকে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য পলাশীর দিকে রাস্তা খুলে দেওয়া হবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “জনগণ যাতে নিরাপত্তাহীন না ভোগে সেজন্য আমরা সুশৃঙ্খলাভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছি।”
“দেশবাসী ও নগরবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই- আপনার সুশৃঙ্খলা ভাবে ফুল দেবেন . . . , আর যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয় সেজন্য পুলিশকে সহায়তা করবেন।”
এদিকে বৃহস্পতিবারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজিমপুর কবরস্থান ও শহীদ মিনারে জনসাধারণের যাতায়াতের সুবিধার্থে একটি রুট-ম্যাপ প্রকাশ করেছে ‘একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’।
এতে জানানো হয়, জনসাধারণ পুরনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমি, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট-ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেইট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবেন।
শহীদদের কবর জিয়ারতের পর আজিমপুর কবরস্থানের মূল গেইট (দক্ষিণ দিকের) দিয়ে বের হয়ে আজিমপুর সড়ক হয়ে পলাশী মোড় ও ফুলার রোড মোড় হয়ে অর্থাৎ সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনে দিয়ে শহীদ মিনারে যাবেন ।
আর কবরস্থানে না গিয়ে বিকল্প পথে যারা শহীদ মিনারে যেতে চান তারা উপাচার্য ভবন পার হয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড় থেকে বাম দিকের রাস্তা দিয়ে (জহুরুল হক হলের পশ্চিমের রাস্তা) সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন।
এছাড়া নিউমার্কেট ক্রসিং থেকে হোম ইকোনমিক্স ও ইডেন কলেজের সামনের রাস্তা দিয়েও আজিমপুর (বেবি আইসক্রিম) মোড়, পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা হয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে।
চাঁনখার পুল এলাকা থেকে বকশি বাজার মোড় হয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা দিয়েও পলাশী মোড় হয়ে সলিমুল্লাহ হল ও জগন্নাথ হলের সামনের রাস্তা দিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া যাবে ।
তবে জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাৎ শিব বাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চাঁনখার পুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে ।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চাঁনখার পুল হয়ে শুধুমাত্র প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।