মঙ্গলবার, মে ৭, ২০২৪

আজ শনিবার শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গননা শুরু

যা যা মিস করেছেন

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ

মহায়ার ভোরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘুম ভাঙে রেডিওতে ভেসে আসা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সুমধুর কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ ও মহিষাসুরমর্দিনীর সুর শুনে। এই কারণে বাঙালির কাছে মহালয়া মানেই দুর্গাপুজা শুরু।
আর তাই আজ শনিবার শুভ মহালয়ার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসবের ক্ষণ গননা শুরু হলো।

মহালয়া আসন্ন শারদীয় দূর্গোৎসবের আগমনী সুর নিয়ে আসলেও শাস্ত্র অনুসারে এই দিনের সঙ্গে দুর্গাপুজার কোনও সম্পর্ক নেই। বরং মহালয়া বা সর্বপিতৃ অমাবস্যা হল প্রয়াত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ শ্রাদ্ধ করার দিন। পণ্ডিতদের অনেকের মতে তর্পণ এবং পার্বণ শ্রাদ্ধের প্রশস্ত দিন হিসেবে মহালয়া পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের তিথি বলে নির্দিষ্ট হওয়ায় একে ‘শুভ’ বলে গ্রাহ্য না করাই ভালো। মহালয়া কথাটি এসেছে ‘মহত্‍ আলয়’ থেকে। হিন্দু ধর্ম অনুসারে পিতৃপক্ষে প্রয়াত পিতৃপুরুষরা তাঁদের বংশধরদের হাত থেকে জল নিতে মর্ত্যলোকে আসেন। এই ১৫ দিন এখানে কাটিয়ে মহালয়াতেই তাঁরা জল গ্রহণ করে তৃপ্ত হয়ে ফিরে যান। অনেকের মতে প্রয়াত পিতৃপুরুষদের জল ও পিণ্ড প্রদান করে তাঁদের তৃপ্ত করা হয় বলেই মহালয়া একটি পূণ্য তিথি। একে অশুভ মনে করার কোনও কারণ নেই।

আবার রামায়ণ অনুসারে, ত্রেতা যুগে শ্রীরামচন্দ্র অকালে দেবী দুর্গার পুজা করেছিলেন রাবণকে পরাজিত করে সীতাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে। শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজা বসন্তকালে হওয়াই নিয়ম। কিন্তু রামন্দ্র অকালে দুর্গাপুজা করেছিলেন বলে শরত্‍কালের দুর্গাপুজাকে অকাল বোধন বলা হয়। হিন্দু ধর্মে কোনও শুভ কাজের আগে প্রয়াত পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা অর্পণ করতে হয়। লঙ্কা জয়ের আগে এমনটাই করেছিলেন রামচন্দ্র। সেই থেকে মহালয়ায় তর্পণ অনুষ্ঠানের প্রথা প্রচলিত।

এছাড়া মহাভারতে অন্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। মহাভারত অনুসারে মৃত্যুর পর কর্ণের আত্মা পরলোক গমন করলে তাঁকে খাদ্য হিসেবে সোনা ও রত্ন দেওয়া হয়। দেবরাজ ইন্দ্রকে কর্ণ-এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে ইন্দ্র বলেন,দানবীর কর্ণ সারা জীবন সোনা মণি মাণিক্য দান করেছেন। কিন্তু প্রয়াত পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান করেননি। তাই স্বর্গে খাদ্য হিসেবে তাঁকে সোনাই দেওয়া হয়েছে। তখন কর্ণ জানান যে তাঁর পিতৃপুরুষ কারা, কোন বংশে তাঁর জন্ম, তা জানতেন না। সেই কারণে কখনোও পিতৃগণের উদ্দেশ্যে খাদ্য দান করেননি। এরপর দেবরাজের নির্দেশে কর্ণ ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করেন। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়।
প্রয়াত পূর্বপুরুষদের স্মরণ করার দিনও মহালয়া। এই দিন তিল-জল দিয়ে তর্পণ করে প্রয়াত পিতৃপুরুষদের পরিতৃপ্ত করা হয়। এই তর্পণ যেমন প্রয়াত বাবা মা বা পূর্বপুরুষের জন্য, তেমনই সমগ্র জীবজগতের জন্যও করেন সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীরা।

মহালয়ার সময় ঘোর অমাবস্যা থাকে।কিন্তু দেবী দুর্গার মহাশক্তির আলোয় সেই অমাবস্যা দূর হয়। প্রতিষ্ঠা পায় শুভশক্তি। আজকের এ পূণ্য লগ্নে মন্দিরে মন্দিরে চণ্ডী পাঠ ও বিশেষ পূজার মাধ্যমে দেবী আবাহন করেন ভক্তরা। আজকের দিনে দেব দেবীরা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। শুধু তাই না, মহালয়ার সময় প্রেতলোক থেকে পিতৃপুরুষের আত্মারা ফিরে আসে মর্ত্যলোকে। তৈরি হয় মহা আলয়।

পিতৃপক্ষের শেষে দেবীপক্ষের সূচনার মাধ্যমে বাঙালি হিন্দুদের ঘরে ঘরে দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের ঢাক বেজে উঠে। অমাবশ্যার পরবর্তী তিথি প্রতিপদ থেকে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে মহাসাড়ম্বরে শারদীয় দূর্গোৎসব।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security