কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন (স্টাফ রিপোর্টার) : দিনের বেলায় ভেঁজা বালু পরিবহন বন্ধে ও বিকল্প হিসেবে বাইপাস রাস্তা নির্মানের দাবী নিয়ে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা সদরে বাজারের সকল শ্রেণির দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে নেমেছে।
সোমবার সকাল থেকে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের উপজেলার পৌর শহরের প্রধান সড়কে তাদের আকস্মিক শান্তিপূর্ণ এ অবস্থান কর্মসূচী ও বিক্ষোভ।
রাস্তায় অবস্থান করে ব্যবসায়ীরা বলতে থাকেন, দীর্ঘদিন ধরে দুর্গাপুর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক দিয়ে ভেঁজা বালু পরিবহন করায় তাদের দোকানের সামনে কাঁদা জমে স্তুপে পরিনত হয়েছে। সারাদিন ভেঁজা বালু পরিবহনে হাজার হাজার ট্রাক ও লরি কারনে দীর্ঘক্ষণের যানজটের ফলে ঠিকমত ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না তারা।
শহরের সড়কগুলোতে কাঁদা ও খানা-খন্দে কাঁদা পানি জমে থাকায় কেনাকাটা করতে ক্রেতারা বিমুখ হয়ে পড়েছেন। জুতা পড়ে শহর দিয়ে হাঁটা দুস্কর। ‘শুস্ক এই মৌসুমে সড়ক যেন বর্ষার আমেজ বিরাজ করে সবর্দা’। যার কারনে পর্যটন এলাকা হওয়া সত্ত্বেও পর্যটকেরা আসলে জুতা ও পোশাক নষ্ট হয়ে এলাকার প্রতি বিরূপ ধারা পোষন করে চলে যান।
এ অবস্থায় গ্রামাঞ্জলের ক্রেতারা কেনাকাটা করতে এ বাজারে আসতে চান না এবং এ বাজারের প্রতি বিমুখ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন বাজারগুলোতে কেনাকাটা করতে ক্রেতাদের এখন আগ্রহ বেশি। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের ইউএনও মহোদয়কে জানানো হলেও আশ্বস্ত করেন, কিন্তু এ পর্যন্ত কোন প্রতিকার ও সুফল আমরা পায়নি। প্রতিদিন আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমে যাওয়ায় লোকসানে মুখে পড়েছি। দোকান ব্যয় নির্বাহ করছি, কিন্তু সে অনুযায়ী লাভের মুখ দেখতি পারছি না। তাছাড়া রয়েছে ব্যাংক ঋণের সুদের হার।
বাধ্য হয়ে আমরা ব্যবসায়ীরা রাস্তায় শান্তিপূর্ণ এ অবস্থানের মাধ্যমে প্রশাসনের কাছে দাবী, দিনের বেলা পৌর শহরে ভেঁজাবালু পরিবহন বন্ধসহ শহরের পাশ দিয়ে বিভিন্ন বালুমহলের বালু পরিবহনে বাইপাস সড়ক নির্মানের ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বছরব্যাপী পাঁকা সড়কে, কাঁদা দিয়ে যাতায়াত করতে করতে হাঁপিয়ে পড়েছি। আমরা (ব্যবসায়িরা) এর পরিত্রাণ চায়।
এ বিষয়ে দুর্গাপুর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী সাহা বলেন, আজকের এ শান্তিপূর্ণ অবস্থা পূর্বপরিকল্পিত নয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ও উপজেলা প্রশাসনকে কয়েকবার অবগত করার পরও প্রতিকার না পেয়ে স্বতস্ফুর্তভাবে এ অবস্থান নিয়েছে দোকানিরা। চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহে থাকায় আমি নিজেও জানতাম না এ অবস্থানের বিষয়টি। দেয়ালে পিঠ পড়ায় বাধ্য হয়ে দোকান বন্ধ করে রাস্তায় অবস্থান করছে। এর আগেও শিক্ষার্থীরা দিনের বেলায় ভেঁজা বালূ পরিবহন বন্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছে।
করোনারকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় রাস্তায় অবস্থান আরও বড় আকারে হতো। আমরাও ব্যবসায়ী এবং কোটি কোটি টাকায় বালুমহাল যারা ইজারা নিয়েছেন তারাও ব্যবসায়ী। দুই পক্ষকে ব্যবসায় মুলধন খাটিয়ে লাভ করতে হবে। আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দোকানীরা প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা বিক্রি করতে না পারলে তাদের সংসার চলবে কি করে? আপনাদের (সাংবাদিদের) সহ সকলে সহযোগিতা চান এ ব্যবসায়ী নেতা।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক মো. কাজি মো. আবদুর রহমান জানান, দুর্গাপুরের নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) বলা হয়েছে তাদের সাথে আলোচনায় বসার এবং সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জানানো জন্য। এভাবে ভেঁজাবালু পরিবহন আসলে-তো অন্যায়। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আমি চাই সাধারণ জনগণের কাছ থেকে এধরনের সমস্যার বিষয়গুলো আমার কাছে আসুক। আমি যেন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারি ভালভাবে। ইউএনও দোকানিদের সাথে আলোচনায় বসতেছে সমস্যাগুলো ফাইন্ডিং আকারে আসলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।