নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় কারও অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের দেখতে রোববার ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন৷
মন্ত্রী বলেন, “একটি মামলা করা হয়েছে৷ মামলাটি হয়েছে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর ধারায়। এর জন্য তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। যদি কারো গাফলতি পাওয়া যায়, তাদের বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷”
নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের সময় ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
সে সময় মসজিদে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষের সবাই কমবেশি দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে যে ৩৭ জনকে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছিল, তাদের ২৪ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন।
মন্ত্রী বলেন, “এখন ১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন৷ তাদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তাদেরকে বাঁচাতে চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
“আহতদের প্রায় সবারই ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে৷ সবারই শ্বাসনালী পুড়েছে৷ যার কারণে কেউই এখন পর্যন্ত ঝুঁকিমুক্ত নন৷”
বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে শনিবার সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার রাতে এশার নামাজের পর মসজিদটিতে আধা ডজন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র একসঙ্গে বিস্ফোরিত হয়ে ১১ জনের মৃত্যু ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস বলছে, ওই মসজিদের নিচ দিয়ে তিতাসের যে গ্যাসের পাইপ গেছে, সেখানে লিকেজ থেকে গ্যাস জমে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জেলা প্রশাসন, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, সিটি করপোরেশন আলাদা পাঁচটি কমিটি গঠন করেছে।
বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে পুলিশ, যেখানে ‘অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর’ অভিযোগ আনা হয়েছে।
ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেছেন, মসজিদ পরিচালনা কমিটি, তিতাস গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িতদের কারও অবহেলায় এ ঘটনা ঘটে থাকলে তাদের এ মামলায় আসামি করা হবে।
হাসপাতালে আহতদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার পর জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সার্বক্ষণিক খবর নিচ্ছেন৷ আহতদের সঠিক চিকিৎসা দিতে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন৷”
ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে আরও বার্ন ইউনিট খোলা কোনো উদ্যোগ সরকার নেবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে৷ তবে আমাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে৷”
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জের মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
“প্রাথমিকভাবে নিহতদের সৎকারের জন্য বিশ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য দশ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে৷ তবে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব৷”
প্রতিমন্ত্রী জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে৷ আহতদের চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্রসহ সব বিষয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে৷