মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

জেল থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী পলাতক

যা যা মিস করেছেন

গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি আবু বক্কর সিদ্দিকের পালিয়ে যাওয়ার রহস্য ভেদ করেছে তদন্ত কমিটি। নিজের তৈরি মই দিয়েই কারাগারের উচু দেওয়াল টপকে পার হয়ে গিয়েছিলেন সিদ্দিক। পালানোর সময় পরনে কয়েদির পোশাক না থাকায় তাকে কেউ বাধা দেয়নি।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে কয়েদি পালানোর ঘটনায় সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটির করা অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, কারাগারে মই বানাতে দেখেও তার কাছ থেকে কেউ সে ব্যাপারে জানতেও চাননি।

এ ছাড়া সিদ্দিকের পালিয়ে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টা পর মেইলের মাধ্যমে ঘটনাটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানানো হয়। ঘটনার দিন কারাগারের সার্চ লাইট অকেজো ছিল। এমনকি ৪৮টি সিসিটিভি ক্যামেরার মধ্যে ২৭টি অচল ছিল।

গত ৮ ও ১৩ আগস্ট অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি কারাগার পরিদর্শন করে। পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও ৪২ জন কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাক্ষ্য ও অন্যান্য নথি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন তৈরি করে কমিটি। এতে বলা হয়, জেল সুপার ও জেলার যদি কারা অভ্যন্তরে আরও তদারকি করতেন এবং ডেপুটি জেলাররা যদি তাদের নির্দিষ্ট এলাকাগুলো নিয়মিত ঘুরতেন এবং কারারক্ষীরাও যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে কারাগারের ভেতরে মই থাকত না।

তদন্ত কমিটির ঘটনার বর্ণনা থেকে জানা গেছে, ঘটনার দিন (৬ আগস্ট) বেলা সোয়া ১১টায় কাঁধে একটি মই নিয়ে সাধারণ পোশাকে ব্রহ্মপুত্র ভবনের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া আসামি আবু বক্কর সিদ্দিক। এ সময় দায়িত্বরত কারারক্ষীদেও কেউ ঘোরাফেরা করছিলেন। কেউ গল্প করছিলেন। সিদ্দিক মই কাঁধে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র ভবনের বাইরের ফটক দিয়ে বেরিয়ে মাঠের ভেতর দিয়ে কারাগারের মূল ফটকের দিকে যান। মই থাকলেও মূল ফটকে দায়িত্বরত কারারক্ষীর বাধার সম্মুখীন হননি তিনি।

৬ আগস্ট দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে মই পড়ে থাকতে দেখে একজন কারারক্ষী মইটি কেস টেবিলে পাঠান কয়েদি গোয়েন্দা জাকিরকে দিয়ে। সে সময় কেস টেবিলে সর্বপ্রধান কারারক্ষী বসা ছিলেন। তদন্ত কমিটি বলছে, পুরো ঘটনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে বিলম্ব করেছেন কারারক্ষী থেকে শুরু করে জেল সুপার। এ ব্যাপারে জানাননি কেস টেবিলে বসা সর্বপ্রধান রক্ষী আবুল কালাম আজাদ, গোয়েন্দা সহকারী প্রধান রক্ষী আহাম্মদ আলী, গোয়েন্দা কারারক্ষী হক মিয়া কেউই। এমনকি তারা মই কেস টেবিলে আসার ব্যাপারেও ‍কিছু জানাননি। গণনায় একজন কয়েদি কম থাকার বিষয়টি সামনে এলেও কারারক্ষী বিষয়টি জেলার বা জেল সুপারকে জানাননি। এদিন সন্ধ্যায় ফের বন্দী গণনার সময় একজন কম থাকায় বিষয়টি ডেপুটি জেলার ও জেলারের সামনে আসে। ৭ আগস্ট গাজীপুরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনা সম্পর্কে জানানো হয়।

তদন্তে এও উঠে এসেছে, আসামি সিদ্দিক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত একজন কয়েদি হওয়া সত্ত্বেও কখনো নির্দিষ্ট পোশাক পরতেন না। তবুও তাকে কয়েদি পোশাক পরতে বাধ্য করার জন্য কোনো বিশেষ পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সিদ্দিক এর আগে ২০১৫ সালেও একবার নিখোঁজ হয়েছিলেন। তা ছাড়া অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে তিনি অন্য বন্দীদের থেকে আলাদা থাকতেন।

পুরো ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার জাহানারা বেগমসহ মোট ২৫ জনকে দায়ী করা হয়েছে। বন্দী পালানোর ঘটনায় কারাবিধি ও সরকারি চাকরি বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কারাবিধি ও সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দোষীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া কারাগারের সব সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রাখা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও এসব ক্যামেরার ফুটেজের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে বলেছেন। এ ছাড়া নিরাপত্তাসংক্রান্ত কোনো অবকাঠামোগত ত্রুটি থাকলে মেরামত বা সংস্কারের ব্যবস্থা করা, কয়েদি পোশাক পরা নিশ্চিত করাসহ মোট ১৬টি সুপারিশ করেছে কমিটি।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security