বৃহস্পতিবার, মে ২, ২০২৪

কম দামের ইন্টারনেট সেবা আনছে বিটিসিএল

যা যা মিস করেছেন

দীর্ঘদিন টেলিফোন বিল বাকি থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বা গ্রাহক বাসা বদলে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার পর পুরনো সংযোগ চালু না করায় টেলিফোন সংযোগ খালি পড়ে থাকছে। অনেক গ্রাহক বিল পরিশোধ করে সংযোগ সারেন্ডার করছেন বিটিসিএল’র আঞ্চলিক অফিসগুলোতে। এর বিপরীতে নতুন টেলিফোন সংযোগ নেওয়ার আবেদনের সংখ্যা খুবই কম বলে জানা গেছে। তাই এই কোমম্পানির পুরোনো দিন ফিরিয়ে অানতে  কম দামের ইন্টারনেট সেবা আনছে বিটিসিএল। 

বিটিসিএল সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে বিটিসিএল এর গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। ২০১১ সালে তা দাঁড়ায় ৯ লাখ ৪৩ হাজারে। ২০১৬ সালে বিটিসিএল’র গ্রাহক ছিল ৭ লাখ ১৬ হাজার। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা ৬ লাখের মতো। গত ৯ বছরে বিটিসিএলের গ্রাহক কমেছে ৪ লাখেরও বেশি।

বর্তমানে এই টেলিফোন সেবা সংস্থাটির ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যাও খুব বেশি নয়। বিটিসিএল’র জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,অ্যাসিমেট্রিক ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন (এডিএসএল) তথা উচ্চগ্রতির ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৭৯ এবং জিপন (গিগাবাইট প্যাসিভ অপটিক্যাল নেটওয়ার্ক)-এর গ্রাহক সংখ্যা ৯৫০। সব মিলিয়ে বিটিসিএলর ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা (সংযোগ) ১৮ হাজার ৬৯৯।

গ্রাহক হারিয়ে ধুঁকতে থাকা এই প্রতিষ্ঠানকে টেনে তোলার জন্য এখন পর্যন্ত কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। এই প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট কম দামের এবং উচ্চগতিসম্পন্ন হলেও এখনও পর্যন্ত গ্রাহক সংখ্যা ২০ হাজারও হয়নি। দিনদিন আরও নিম্নগামী এই প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চাইলে ডাক,টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১০ বছর পরে আর কেউ ভয়েস কল করবে না। অনেক পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তনে টিকে থাকতে হলে নিজেদেরও পরিবর্তন আনতে হবে। আমি বিটিসিএলকে বলে দিয়েছি ডেটা কানেক্টিভিটির (ইন্টারনেট সংযোগ) ওপর জোর দিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিটিসিএল এর যে অবকাঠামো আছে, যে এক্সচেঞ্জগুলো আছে সেগুলো যদি ডেটা এনাবল করে দেওয়া যায় তাহলে বিটিসিএল ডেটা পৌঁছানোর জায়গায় ডেটা পৌঁছাতে পারবে। মোবাইল ইন্টারনেটে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু বিটিসিএল’র ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে সেই সীমাবদ্ধতা নেই।’

মন্ত্রী উল্লেখ করেন, ‘বিটিসিএল এর সমস্যা হচ্ছে তার প্রযুক্তি আপডেটেড নয়। বিটিসিএল সম্প্রতি যে এমওটিএন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তা ডেটা স্ট্রেংন্থকে বাড়িয়ে দেবে। বিটিসিএলকে বলেছি, তোমরা ডেটার (ইন্টারনেট) সম্প্রসারণে মনযোগী হও। এনটিটিএন সেবা দাও। ব্যান্ডউইথ ডিস্ট্রিবিউশনের দিকে বেশি কাজ করো। এছাড়া বিটিসিএল এর টিকে থাকার কোনও সুযোগ নেই। যেখানে এসে বিটিসিএল দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে ফিরতে হলে ডেটার দিকে মনোযোগী হতেই হবে।’

দেশে ফোরজি চালুর পরে ২৫ শতাংশ ভয়েস কল কমে গেছে ‍উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিটিসিএলকে আর শুধু টেলিফোন অপারেটর বলতে চাচ্ছি না। ভয়েস কল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে ইন্টারনেট দিয়েই অপারেটরটিকে দিকে থাকতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিটিসিএলের ধারণক্ষমতা প্রায় ১৩ লাখ সংযোগ। বর্তমানে ৭ লাখের বেশি সংযোগ তথা লাইন খালি পড়ে আছে। কারণ, ল্যান্ডফোনের প্রতি গ্রাহকের আগ্রহ নেই। দুদিন পরপর কেবল কাটা পড়া, টেলিফোন ডেড হয়ে থাকা,লাইনম্যানদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদির কারণে গ্রাহকরা ল্যান্ডফোনমুখী হতে চান না। অন্যদিকে মোবাইল সংযোগের সহজলভ্যতা, বহনযোগ্যতা, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, ইন্টারনেটের সহজপ্রাপ্যতার কারণে অনেক আগে থেকেই গ্রাহক ল্যান্ডফোন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে ল্যান্ডফোন সংযোগ ও বিটিসিএল এর ইন্টারনেট সংযোগ পেতে ভোগান্তির কারণে গ্রাহকরা ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে ইন্টারনেট সেবা নিতে আগ্রহী। অন্যদিকে বিকল্প ইন্টারনেট ব্যবস্থা ‘মোবাইল ইন্টারনেট’ এখন প্রধান সেবা মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।

বিটিসিএল এর ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা যায়,নতুন টেলিফোন সংযোগ পেতে এখন রাজধানীতে খরচ দুই হাজার টাকা। চট্টগ্রামে সংযোগ খরচ এক হাজার টাকা। অন্যান্য বিভাগীয় শহর,জেলা ও উপজেলায় নতুন সংযোগের খরচ ৬০০ টাকা। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় প্রতি মাসে গ্রাহককে লাইন রেন্ট (ভাড়া) দিতে হয় ১৬০ টাকা। এর বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহরে লাইন রেন্ট ১২০ টাকা। উপজেলার গ্রাহকদের দিতে হয় ৮০ টাকা।

অথচ এক সময় এই সংযোগ নিতে ডিমান্ড নোট দিতে হতো ১৮ হাজার টাকার। মাসের পর মাস,এমনকি বছরেরও বেশি সময় অপেক্ষার পরও মিলতো না এই সংযোগ। আর লাইনম্যানদের দৌরাত্ম্যে গ্রাহকরা সংযোগ নেওয়া এবং চালু করতেও ভয় পেতেন। বর্তমানে এসব চিত্রের আর কিছুই নেই। আবেদন করলে দ্রুত সংযোগ মেলে। লাইনম্যানদের দৌরাত্ম্যও মিইয়ে গেছে। কিন্তু গ্রাহক আর ওমুখো হচ্ছেন না।

এখন বিটিসিএল টু বিটিসিএল প্রতি মিনিটের চার্জ ১০ পয়সা (রাত ৮টা থেকে সকাল ৮টা। আর সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রতি মিনিটের কল চার্জ ৩০ পয়সা। তবে বিসিসিএল এর ল্যান্ডফোন থেকে অন্যকোনও ফোন বা মোবাইল কল করলে প্রতি মিনিটের জন্য দিতে হয় ৮০ পয়সা।

বিটিসিএল কোম্পানি হওয়ার পর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির আয় হয় ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর ব্যয় হয় ১ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। এই ভারসাম্যপূর্ণ আয়-ব্যয় পরে আর দেখা যায়নি। ২০১১-১২ অর্থ বছরে বিটিসিএল আয় করেছিল ২ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা। আর খরচ করেছে ২ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এর আগের বছর আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর ব্যয় করেছিল ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে আয় ও ব্যয় ছিল যথাক্রমে ১ হাজার ২৪১ কোটি এবং ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৪৪ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে কোম্পানিটিকে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে কোম্পানিটির আয় ছিল ৮৪৩ কোটি ৯৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৬ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ছিল ৫০৪ কোটি ৪৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৪ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে বিটিসিএলের আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৪০ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৭২ টাকা। আর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আয়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩৬ কোটি ৩০ লাখ ১৮ হাজার ৯৩০ টাকা।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security