মঙ্গলবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৪

মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি,কর্মী নিয়োগে পরিবর্তন আসছে

যা যা মিস করেছেন

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। কর্মীরা যাচ্ছেন এবং যাবেন। কর্মী পাঠানোর বর্তমান পদ্ধতি বন্ধ হলে আগের পদ্ধতিতে লোক যাবে। 
আজ মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস (আরবিএম) আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।অভিবাসী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেট অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে—এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরিবর্তন আনছে দেশটি। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।

ড. মাহাথির মোহাম্মদ মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত দুই বছরে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিকদের পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই বছরে কমপক্ষে ২০০ কোটি রিঙ্গিত (৪ হাজার ৮০ কোটি ৩ লাখ টাকা ) হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়ার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের তদন্ত ও শ্রমিক পাঠানোর পদ্ধতি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। আগস্ট মাসে এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানায় মালয়েশিয়া।

জানা গেছে, দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে (জি টু জি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার সমঝোতা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় দশটি জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিকে লোক পাঠাতে অনুমোদন দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ মালয়েশিয়া স্থগিত করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। দেশটির সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু দুই হাজার রিংগিত খরচ হবে, কিন্তু এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১০টি এজেন্সি সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এ সিন্ডিকেটের পকেটে ২০০ কোটি রিংগিত গত দুই বছরে গিয়েছে। আর এ অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত থাকবে।

জানা গেছে, আলোচিত এই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো বায়রার সাবেক সভাপতি নুর আলীর ইউনিক ইস্টার্ন, বায়রার সাবেক সভাপতি গোলাম মোস্তফার প্রান্তিক ট্রাভেলস, বায়রার সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব রুহুল আমিনের মালিকানাধীন ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, বদরুল আমিনের ক্যারিয়ার ওভারসিজ, আরিফুল ইসলামের আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, শেখ আবদুল্লাহর সনজরী ইন্টারন্যাশনাল, মোহাম্মদ বশিরের রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, আরিফ আলমের প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, ব্যবসায়ী রুহুল আমিনের আমিন ট্যুরস ও জয়নাল আবেদিনের আল ইসলাম ওভারসিজ।

এদিকে, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মী নিয়োগে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রবিবার (২৬ আগস্ট) এক বিবৃতিতে জনশক্তি রফতানিতে একচেটিয়া ও সিন্ডিকেটভিত্তিক অনৈতিক ব্যবসা বন্ধে মালয়েশিয়া সরকারের এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখার জন্য সরকারের কাছে আহ্বান জানান টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তার মতে, ‘এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিবাচক ও অংশগ্রহণমূলক আলোচনার মাধ্যমে পুনরায় অভিবাসী কর্মী পাঠানোর সুষম সুযোগ তৈরির পথ সুগম হয়েছে। এটাও পরিষ্কার—এ সুযোগ গ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে পুরো খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করা। একই সঙ্গে যারা অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা।’

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানো ১০টি প্রতিষ্ঠানের একটি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিসের (বায়রা) সদ্য বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব মো. রুহুল আমিন স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি, শুধু পদ্ধতিগত পরিবর্তন আসছে। যারা ভিসা পেয়েছেন, তারা যাবেন, এতে কোনও বাধা নেই। আগে একজন শ্রমিক পাঠাতে ৪টি ধাপে কাজ করতে হতো। এগুলো পৃথক পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করতে হতো। কিন্তু এখন পদ্ধতি পরিবর্তনের ফলে এই ৪টি ধাপ একটি প্রতিষ্ঠানই করতে পারবে।’

১০টি রিক্রুট এজেন্সির বাধ্যবাধকতা প্রসঙ্গে মো. রুহুল আমিন স্বপন বলেন, ‘এ বিষয়ে মালয়েশিয়া কথা বলেছে, কিন্তু কী পদ্ধতি হবে, সেটি এখনও পরিষ্কার করা হয়নি।’

সিঙ্গাপুরে থাকায় এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলামের মন্তব্য জানা যায়নি। তবে, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ হয়নি। শ্রমবাজার বন্ধের যে খবর ছড়িয়েছে, তাও ঠিক নয়। তবে কর্মী নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসবে। কী পরিবর্তন হবে, কীভাবে হবে, সে বিষয়ে মালয়েশিয়া অফিসিয়ালি আমাদের জানায়নি। তবে যারা আগে ভিসা পেয়েছেন, তাদের মালয়েশিয়া যেতে কোনও বাধা নেই।’

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdjobs@gmail.com ঠিকানায়।

More articles

সর্বশেষ

x  Powerful Protection for WordPress, from Shield Security
This Site Is Protected By
Shield Security