উচ্চ আদালতের ছাড়পত্র নিয়ে দায়িত্বে ফেরার দিনেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে ফের বরখাস্ত করেছে সরকার।
রাজশাহী মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের চার্জশিট এবং সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ২২ মার্চ সম্পূরক চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেছেন। এর ভিত্তিতেই তাদের দ্বিতীয় দফায় বরখাস্ত করা হয়।
দ্বিতীয় দফায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া দুই মেয়রের মধ্যে বুলবুল ২০১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মেয়র নির্বাচিত হন। ২০ দলীয় জোটের সরকার বিরোধী আন্দোলনের সময় নাশকতার চার মামলায় পুলিশের অভিযোগপত্রের পর বুলবুলকে ২০১৫ সালের ৭ মে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। তবে হাইকোর্টে ও আপিল বিভাগে এই আদেশ অবৈধ বলে রায় পান বুলবুল।
২০১৩ সালের ১৫ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক। অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি তাকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরে আরিফের নাম সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের জনসভায় বোমা হামলার মামলার চার্জশিটেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ১৩ মার্চ আরিফের রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ বরখাস্তের আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিতের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন। তবে ২২ মার্চ সিসিক মেয়রের বিরুদ্ধে থাকা মামলার সম্পূরক চার্জশিট আদালত গ্রহণ করেন।
আদালতের রায় দুই মেয়রের পক্ষে থাকায় তারা রবিবার (২ এপ্রিল) দায়িত্ব বুঝে নিতে যান নিজ নিজ কার্যালয়ে। দুই মেয়রই কার্যালয়ে ঢুকেই পান বরখাস্তের চিঠি। ওই চিঠি দু’টিতে মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১, মামলা নং- ১৩৬/১৫-এর অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় রাসিক মেয়র এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল মামলা-৪/২০০৯-এর সম্পূরক অভিযোগপত্র গত ২২ মার্চ আদালতে গৃহীত হওয়ায় সিসিক মেয়রকে বরখাস্ত করার আদেশ দেয় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ (২০০৯ সনের ৬০নং আইন)-এর ধারা ১২-এর (১) এর ক্ষমতাবলে দুই মেয়রকে বরখাস্ত করা হয়।
রাসিক ও সিসিক মেয়রকে বরখাস্ত করে রবিবার (২ এপ্রিল) জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ৬০ নং আইন) এর ধারা ১২-এর উপ-ধারা (১) এ সিটি করপোরেশনের মেয়রের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইলে, সরকার কর্তৃক লিখিত আদেশের মাধ্যমে তাহাকে (মেয়রকে) সাময়িকভাবে বরখাস্তের বিধান রহিয়াছে।’
দুই মেয়রের দলের নেতারা অভিযোগ করছেন, উচ্চ আদালতের রায় দুই মেয়রের পক্ষে থাকলেও সরকার তাদের নতুন মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। তারা বলছেন, কোনও কোনও ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পুরনো মামলাও জাগিয়ে তুলে তাদের বরখাস্তের বেড়াজালে ফেলা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষরকারী স্থানীয় সরকার বিভাগের দুই উপ-সচিব মো. মাহমুদুল আলম ও মুহম্মদ আনোয়ার পাশা বলেছেন, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯-এর ধারা ১২-এর উপ-ধারা (১)-এর ক্ষমতাবলে তাদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এর বেশি কিছু তারা বলতে পারবেন না।
দুই মেয়রকে বরখাস্তের রাজনৈতিদকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এ অভিযোগ মানতে নারাজ আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নিয়েছে। তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে থাকার কোনও এখতিয়ার তাদের নেই বলেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাদের বরখাস্ত করেছে। এতে রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্য নেই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এই বিষয়ে রাজনৈতিক কোনও বক্তব্য আমাদের নেই। কারণ এখানে আইনি বিষয় সংশ্লিষ্ট রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শুধু এইটুকু বলতে পারি, এখানে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘এটা একেবারেই আইনি বিষয়। এখানে রাজনৈতিক কোনও বিষয় নেই। আর সব বিষয়ের রাজনীতিকরণ ঠিকও নয়।’