উইকিলিকসকে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথিপত্র দেওয়ার অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত মার্কিন সেনা চেলসি ম্যানিংয়ের সাজা কমিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বিদায় নেওয়ার মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকতে ওবামা মঙ্গলবার ম্যানিংয়ের সাজা ৩৫ বছর থেকে কমিয়ে সাত বছর করার এই আদেশে সই করেন বলে বিবিসি জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কূটনৈতিক নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় এ ঘটনায় ২০১৩ সালে ম্যানিংকে ৩৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল। দণ্ডের পুরো মেয়াদ জেলে থাকতে হলে বর্তমানে ২৯ বছর বয়সী ম্যানিং ২০৪৫ সালের আগে মুক্তি পেতেন না।
সাজা কমায় চলতি বছরের ১৭ মের মধ্যে মুক্তি পাবেন ম্যানিং, যিনি বিচার চলার মধ্যেই ২০১৩ সালে নিজেকে নারী ঘোষণা করে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর ‘প্রাইভেট ফার্স্ট ক্লাস’ ব্র্যাডলি ম্যানিং ২০১০ সালে ইরাকে দায়িত্ব পালনের সময় সাত লাখের বেশি গোপন নথি, যুদ্ধক্ষেত্রের ভিডিও ও কূটনৈতিক বার্তা উইকিলিকসের কাছে তুলে দেন।
এর মধ্যে ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীর একটি অ্যাপাচে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে বাগদাদে ১২ বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ভিডিও ফুটেজও ছিল। আরও ছিল ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া অনেককে গুয়ানতানামো কারাগারে বিনা বিচারে আটকে রাখার তথ্য।
ম্যানিংয়ের কাছ থেকে পাওয়া নথি জুলিয়ান অ্যাস্যাঞ্জ তার ওয়েবসাইট উইকিলিকসে প্রকাশ করলে সারাবিশ্বে তোলপাড় শুরু হয়, অস্বস্তিতে পড়তে হয় ওয়াশিংটনকে।
গোয়েন্দা নথি উইকিলিকসকে দেওয়ায় ২০১০ সালে ম্যানিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাজা ঘোষণার পর তাকে পাঠানো হয় কানসাসের ফোর্ট লেভেনওর্থ কারাগারে।
কিন্তু ম্যানিং সেসময় নিজেকে নারী ঘোষণা করেন এবং পুরুষদের ওই কারাগারে থাকতে আপত্তি জানান। ব্র্যাডলি নয়, চেলসি ম্যানিং নামে ডাকতে সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
লিঙ্গান্তরের প্রক্রিয়ায় থাকা ম্যানিং কারাগারে হরমোন চিকিৎসা না পেয়ে ২০১৫ সালে একদফা অনশন করেন। গত বছর তিনি বারকয়েক আত্মহত্যারও চেষ্টা করেন বলে সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।
তবে ম্যানিংয়ের সাজা কমায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তার আইনজীবী ডেভিড কুম্বস। একে ওবামার ‘ঔদার্য’ অভিহিত করে তিনি বলেছেন, “চেলসি ও আমি দুজনেই কৃতজ্ঞ।”
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের নথি ফাঁসের বিষয়টি প্রথম প্রকাশ করা সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ডও বলছেন, ম্যানিংয়ের কাজ ছিল ‘নায়কোচিত’।
“তিনি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমার মতে, তার আসলে একদিনও জেলে থাকা উচিত ছিল না।”
ওবামার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন লন্ডনের একুয়েডর দূতাবাসে স্বেচ্ছাবন্দি উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ।
এক টুইটে তিনি বলেন, “যারা চেলসি ম্যানিংয়ের সাজা মওকুফের আন্দোলন করে যাচ্ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি; আপনাদের সাহস আর দৃঢচেতা অবস্থান অসম্ভবকে সম্ভব করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমা পাওয়া ব্যক্তিরা সাজা মওকুফের পাশাপাশি ‘ভোটের অধিকারহরণ’, ‘আগ্নেয়াস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা’সহ বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা থেকেও মুক্তি পান। আর যাদের সাজা কমানো হয়, তারা কেবল দণ্ড থেকে মুক্তি পান; অন্য বাধ্যবাধকতার শর্ত বহাল থাকে।
তবে ক্ষমা বা সাজা কমানোর কোনোক্ষেত্রেই অপরাধীকে ‘দায়মুক্তি’ দেওয়া হয় না।