স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সহায়তাকারী ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলের চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জেএফআর জ্যাকব আজ বুধবার চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি ১৯৭১ সালে সংগঠিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বিখ্যাত।
আজ এক প্রতিবেদনে জ্যাকবের মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়েছে ট্রিবিউনইন্ডিয়া।
আজ ভারতের রাজধানী দিল্লিতে আর্মি রিসার্চ অ্যান্ড রেফারেল হসপিটালে মৃত্যুবরণ করেন জ্যাকব। তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
জেনারেল জ্যাক ফ্রেডেরিক রালফ জ্যাকব ১৯২৩ সালে অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তাঁর পিতা তাকে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ক্ষেত্রে আপত্তি জানান কিন্তু তার পরেও তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ হতে অবসর গ্রহণকারী জেনারেল জ্যাকব ১৯৭১ সালে মেজর জেনারেল হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব পালন করেন। ৩৬ বছরের সেনাবাহিনী জীবনে তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধ এবং ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
১৯৭১ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে তিনি মেজর জেনারেলে পদোন্নোতি লাভ করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব স্টাফের দায়িত্ব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি প্রশংসাসূচক বহু সম্মাননা লাভ করেছেন।
১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশে অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনা করে, তখন লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণভয়ে ভারতে শরণার্থী হয়ে যায়। চিফ অব স্টাফ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যাকব তখন উক্ত সমস্যা নিরসনের উপায় খুঁজতে থাকেন।
অন্যদিকে পাকিস্তানীদের অত্যাচার আরো বাড়তে থাকে। এসব দেখে জ্যাবক তৎক্ষণাৎ তাঁর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, এই সমস্যা নিরসনের একমাত্র উপায় হচ্ছে পাকিস্তানীদের সাথে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর প্রধান শ্যাম মানেকশ পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডকে প্রথমেই চট্টগ্রাম এবং খুলনা শহর দখল করতে নির্দেশ দেন।
জাতিসংঘ এবং চীনের প্রবল চাপের মুখে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশগ্রহণে আপত্তি জানাচ্ছিলেন।
কিন্তু জ্যাকব সব ধরনের চাপের উর্দ্ধে গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে সচেষ্ট হন। প্রথমেই তিনি ঢাকাকে দখলমুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। এর জন্য তিনি সুচারুভাবে এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে অগ্রসর হন। তাঁর পরিকল্পনা অবশেষে সফল হয়। মিত্রবাহিনী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সব যোগাযোগমাধ্যম ধ্বংস করেন।
জ্যাকব বুঝতে পারেন যে, দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো ফলাফল লাভ সম্ভব হবে না। তাই তিনি জেনারেল নিয়াজিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীসহ ১৬ই ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করতে বলেন। তিনি নিয়াজির কাছে আত্মসমর্পণের খসড়া পাঠিয়ে দেন।
এক পর্যায়ে ৯৩ হাজার সৈন্য নিয়ে ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাক বাহিনী প্রধান নিয়াজি আত্মসমর্পণ করেন। পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণকালে ঢাকায় তখন প্রায় ৩০ হাজার পাকিস্তানি সেনা উপস্থিত ছিল, অপর পক্ষে ভারতীয় সেনা ছিল মাত্র তিন হাজার।
তবে এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় মিত্রবাহিনী সঠিক কৌশলের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করায়। নিয়াজি পরবর্তীতে দাবি করেন যে, জ্যাকব তাকে ব্লাকমেইলের মাধ্যমে আত্মসমর্পণে রাজি করিয়েছিলেন।