অর্থায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়া হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সার্ভে চালাতে চেয়েছে জাপানের রাষ্ট্রায়ত্ত উন্নয়ন সংস্থা, জাইকা। গত ২০ ডিসেম্বর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে দেওয়া এক চিঠিতে একথা জানিয়েছেন জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হাতাইদা।
গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, দ্বিতীয় রানওয়ে এবং অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন ও খসড়া মাস্টার প্ল্যান’ উপস্থাপন করা হয়।
ওই মহাপরিকল্পনায় বলা হয়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু চলতি বছর প্রথম পাঁচ মাসেই ৬৭ লাখ যাত্রী এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেছেন। দেশের প্রধান এই বিমানবন্দরের যাত্রী সংখ্যা প্রতি বছর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকায় ২০১৯ সালে নতুন টার্মিনালের প্রয়োজন হবে।
১৩ মে ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন অনুষ্ঠানে দ্রুততম সময়ে তৃতীয় টার্মিনালের কাজ শেষ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু জাইকা, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার এবং কুয়েত ফান্ড কর্তৃপক্ষ এ প্রকল্পে অর্থায়নে রাজি না হওয়ায় সৃষ্টি হয় জটিলতা।
প্রকল্পটিতে জাপানের অর্থায়ন নিয়ে গত ১৫ ডিসেম্বর জাইকা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মন্ত্রী মেনন।
তাকে দেওয়া চিঠিতে জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি লিখেছেন, “নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছ থেকে মাস্টার প্ল্যান পেয়েছি। আমরা এটা সতর্কতার সঙ্গে নিরীক্ষা করে দেখছি এবং প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের খরচে একটি সার্ভে পরিচালনার পরিকল্পনা করছি।
“সার্ভের পর এর ফলাফল নিয়ে যত শিগগির সম্ভব আপনার মন্ত্রণালয়, বেবিচক এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় আগ্রহী।”
এর আগে, গত ৫ অগাস্ট বিমান মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে জাপান দূতাবাস ও জাইকাকে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি।
এরপর অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য চীন সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে বিমান মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া আগামী তিন বছরে বাংলাদেশে আটটি প্রকল্পে অর্থায়ন অনুমোদন করলেও তাতে এ প্রকল্প আসেনি।
কুয়েত ফান্ড কোনো প্রকল্পে যে পরিমাণ সহায়তা করে থাকে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের ‘প্রাক্কলিত ব্যয়’ তার চেয়ে বেশি হওয়ায় তাদেরও সহায়তা করতে অনুরোধ জানানো হয়নি বলে জানানো হয় বিমান মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে।
এ প্রসঙ্গে গত ৯ ডিসেম্বর মন্ত্রী মেনন বলেছিলেন, “কয়েকটি চীনা প্রতিষ্ঠানকে শর্টলিস্টেড করা হয়েছে। আমাদের ইচ্ছা মার্চ-এপ্রিলে কাজ শুরু করা। তবে সেটা মনে হয় হবে না। আশা করি, জুন-জুলাইয়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।”
সব ঠিকঠিক করা গেলে দেড় মাসের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রস্তাব তোলা যাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।