বাবা নাই, ভাই নাই, মায়ের একমাত্র সন্তান সোনাই। রূপে-গুণে অতুলনীয়। মা তাকে মামার কাছে রেখে আসে ভালো পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ঘটকের আনা কোনো পাত্রই মামা-মামির পছন্দ হয় না। এরই মধ্যে সোনাইয়ের সঙ্গে মাধবের দেখা হয়। হয় পরিচয় এবং প্রেম। চলে দেখাশোনা, চিঠি দেয়া নেয়া।
নতুন আঙ্গিকে করা নাটকটিতে এখন থেকে নারী শিল্পীরাও অভিনয় করবেন।সোনাই এবং মাধবের প্রেম এবং বিচ্ছেদের কাহিনি, আর এর মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠা মানব সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে নাটক ‘সোনাই মাধব’। ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ অবলম্বনে পদাবলি যাত্রা ‘সোনাই মাধব’। লোকনাট্য দলের (সিদ্ধেশ্বরী) আয়োজনে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নাটকটির প্রদর্শনী হলো জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার হলে। নাটকে ব্যবহৃত গানের সুরারোপ করেছেন দীনেন্দ্র চৌধুরী ও লিয়াকত আলী। নতুন আঙ্গিকে করা নাটকটির পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী। নাটকে তিনি অভিনয়ও করেছেন।
স্টুডিও থিয়েটারে মঞ্চস্থ সোনাই মাধব` নাটকের একটি দৃশ্য।‘সোনাই মাধব’ নাটকে দেখা যায় গ্রামের দেওয়ান ‘ভাবনা’র অত্যাচারে সুন্দরী মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতে পারছে না। সে সোনাইয়ের কথা জেনে তাঁর মামার কাছে যায়। মামা প্রথমে সোনাইকে ভাবনা’র সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয় না, পরে মৃত্যুর ভয় দেখালে সে বলে দেয় নদীতে জল আনতে গেলে যেন সোনাইকে সে বজরায় তুলে নেয়। ভাবনা তাই করে। বজরা থেকে কান্নার শব্দ শুনে মাধব গিয়ে তাকে উদ্ধার করে এবং দেখে সে মেয়ে তারই সোনাই। ঘরে নিয়ে আসে, বিয়ের আয়োজন করে। কিন্তু দেওয়ান মাধবের বাবাকে ধরে নিয়ে যায়, তাই বাবাকে উদ্ধার করার জন্য মাধব যায় দেওয়ানের কাছে। সোনাই এক বছর একা থাকে ঘরে। তার পর ফিরে আসে তার শ্বশুর, বলে সোনাই না গেলে মাধবকে ছেড়ে দেবে না। বাধ্য হয়ে সোনাই যায় মাধবকে ছাড়াতে। দেওয়ান মাধবকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে এসে দেখে সোনাই বিষ পানে আত্মহত্যা করেছে। কাহিনি শেষ হয় মাধবের হাহাকারে, সে নদীর ঘাটে বসে সোনাইকে ডেকে চলে।
সোনাই মাধব` নাটকের একটি দৃশ্য।
নাটকটিতে ভাবনা চরিত্রে লিয়াকত আলী, সোনাই চরিত্রে রোকসানা, মাধব চরিত্রে জাহিদুল কবির অভিনয় করেছেন। নাটকের অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রহিমা খাতুন, উম্মে মরিয়ম, কিশোয়ার জাহান, মোমিন মিয়া, সুচিত্রা রানি সূত্রধর, রওশন হোসেন, তাজুল ইসলাম মুন্সি প্রমুখ।
লোকনাট্যদলের জ্যেষ্ঠ সদস্য মাসুদ সুমন জানান, ১৯৯০ সালে নাটকটি ঢাকার মঞ্চে আসে। এরপর ৭৭টি প্রদর্শনী হয়। এরপর লোকনাট্যদলের একটি অংশ আলাদা হয়ে গেলে তাদের অংশটি (সিদ্ধেশ্বরী) আর এ নাটকের প্রদর্শনী করেনি। নাটকটি নতুন করে প্রযোজনা করা হয়েছে। যেখানে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও অভিনয় করছে। আগের প্রদর্শনীর হিসেবে করলে গতকাল নাটকটির ৭৮ তম প্রদর্শনী হয়। এখন থেকে নিয়মিত নাটকটির প্রদর্শনী হবে। এ মাসের শেষে এ নাটক নিয়ে ভারত যাত্রা করবে লোকনাট্য দল।